পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি এবং ট্যাংকে কি কি মাছ চাষ করা যায় সে সম্পর্কে
আপনারা অনেকে জানতে চেয়েছেন। তাই কিভাবে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করে বেশি
পরিমাণে মাছ উৎপাদন করা যায় এই বিষয়ে আর্টিকেলটি লিখছি।
এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি
এবং আধুনিক পদ্ধতিতে ট্যাংকে কি মাছ চাষ করা যায় সে সম্পর্কে সকল তথ্য পেয়ে
যাবেন আশা করছি।
সূচীপত্রঃ পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি
পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি
সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি ততোই উন্নত হচ্ছে। বর্তমান
সময়ে এসব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মাছ চাষের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন
ঘটেছে। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত সকল মাছ চাষীরাই আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ
করছে। তাহলে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে মাছ চাষীরা ব্যাপক মাছ উৎপাদন করতে সক্ষম
হচ্ছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে পুকুরে মাছ চাষ করলে স্বল্প খরচের মাধ্যমে অনেক পরিমাণে
লাভবান হচ্ছে। মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি সমূহ জানতে হলে আমাদের অনেকগুলো বিষয়
বিবেচনা করতে হবে। সেই সমস্ত বিষয়গুলো আমি এখন আলোচনা করছি।
সঠিক পরিকল্পনায় কলাকৌশল গ্রহণ : পুকুরে মাছ চাষ করতে হলে সর্বপ্রথম
একটি সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। পরিকল্পনা ছাড়া আপনি কোন কাজে নির্দিষ্ট সময়ে
সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন না। পরিকল্পনা স্থির করার পরে সেই পরিকল্পনা
মোতাবেক কলাকৌশল গ্রহণ করতে হবে।
এই পরিকল্পনা গুলোর মধ্যে থাকতে পারে মাছের জাত নির্বাচন করা, পুকুরে কতদিনের
জন্য মাছ রাখা হবে, মাছ চাষ করতে মোট ব্যয় এর পরিমান কেমন হবে এবং এই ব্যয় কোন
সেক্টর থেকে আপনি নির্ধারণ করবেন, আপনার বাজারজাতকরণ কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে।
এসব পরিকল্পনা এবং কলাকৌশল ছাড়া মাছ চাষ করতে গেলে মাছ চাষীরা অনেক সমস্যার
সম্মুখীন হন এবং মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারেন না।
পুকুর খনন : পুকুরে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক
হতে হবে। কারণ আপনার বাজেট এবং মাছের ধরন দেখে পুকুর খনন করতে হবে। এছাড়া অনেক
সময় পুকুরের মাছ থাকা সময়কালীন নির্বাচন করেও পুকুর খননকার্য প্রক্রিয়া গ্রহণ
করা হয়।
পুকুর খননের সময় যে সমস্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে তা হল - যেখানে পুকুর খনন
করা হবে সেখানকার পরিবেশ কতটা অনুকূল, শুষ্ক মৌসুমে পানি দেওয়ার সুবিধা আছে
কিনা, বর্ষা মৌসুমে পুকুরের পানি কেমন উপরে উঠতে পারে, পুকুরের পাড় এবং ঢাল কেমন
হবে, শুষ্ক মৌসুমে পানির গভীরতা কেমন থাকতে পারে আবার বর্ষা মৌসুমে পানির গভীরতা
কেমন থাকতে পারে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।
আধুনিক পদ্ধতিতে পুকুরে মাছ চাষের জন্য পুকুরের প্রস্তুতি গ্রহণ করা : পুকুরে মাছ ছাড়ার পূর্বে পুকুরের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তুতি
ভালো থাকলে মাছ ছাড়ার পরে মাছের ফলন ভালো হবে এবং মাছের বৃদ্ধি জনিত কোন সমস্যা
দেখা দিবে না।
পুকুর প্রস্তুতির মধ্যে যে সমস্ত বিষয়গুলো রয়েছে তা হল - পুকুরে যদি রাক্ষসী
মাছ দেখতে পাওয়া যায় তাহলে সেই মাছ নিধন করতে হবে অবশ্যই। অন্যথায়
রাক্ষসী মাছগুলো অন্য মাছ খেয়ে ফেলবে। পুকুর অবশ্যই শুকিয়ে ফেলতে হবে এবং
নতুনভাবে পানি দিতে হবে, পরিষ্কার এবং নিরাপদ পানি পুকুরে দিতে হবে, পুকুরে চুন
প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রথম থেকেই পুকুরে যেন খাবার থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে
হবে, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে তা গ্রহণ করতে হবে।
পুকুরের পোনা নির্বাচন করতে হবে : পুকুরে পোনা ছাড়ার সময় যদি পোনা
ভালো না হয় তাহলে সেই পোনা থেকে ভালো ফলন পাওয়া কখনো আশা করা যায় না। এজন্য
পোনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভালো ভালো হ্যাচারি থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে।
কতদিন পুকুরে মাছ রাখবেন সেই হিসাব করে পোনার সাইজ নির্বাচন করে পুকুরে পোনা
ছাড়তে হবে। বীজ ভালো হলে যেমন ভালো ফসল পাওয়া যায় ঠিক তেমনি ভালো পোনা পুকুরে
ছাড়লে ভালো মাছের ফলন পাওয়া যায়।
সঠিক পরিবহন ব্যবস্থা : অনেক সময় মাছ এক পুকুর থেকে আরেক পুকুরে
পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে। আবার অনেক সময় দূরের কোন হ্যাচারী থেকে মাছ
পরিবহনের মাধ্যমে নিয়ে আসার প্রয়োজন পড়ে। সে ক্ষেত্রে আপনার পুকুরে যাতায়াত
করার রাস্তা যদি খারাপ হয় তাহলে গাড়িতে মাছ পরিবহন করার সময় মাছের ক্ষতি হতে
পারে। আমরা জানি, পুকুর স্থির থাকে এবং সেই স্থির পুকুরে মাছ চলাচল করে। কিন্তু
যদি পরিবহনের সময় পানি স্থির না থাকে তাহলে মাছের আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি
থাকে। আঘাত পাওয়া মাছ পুকুরে ছাড়লে সেই মাছ থেকে আপনি কখনো লাভবান হতে পারবেন
না।
আধুনিক পদ্ধতিতে পুকুরে মাছ চাষ করতে হলে নার্সিং ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
: অনেক সময় দেখা যায় যারা মাছ চাষে অভিজ্ঞ নয় তারা সরাসরি হ্যাচারি থেকে
মাছ নিয়ে এসে পুকুরে ছেড়ে দেয়। যার ফলে মাছ অধিকাংশই মরে যায়। পরবর্তীতে মাছ
চাষী বুঝতে পারেন না কিভাবে এত মাছ মারা গেল। এই মাছগুলো মরে যাওয়ার মূল কারণ
হচ্ছে, মাছগুলো হ্যাচারি থেকে নিয়ে এসে নার্সিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই
পুকুরে ছেড়ে দেওয়া।
অর্থাৎ আপনাকে হ্যাচারি থেকে মাছ আনার পরে মাছগুলো নার্সিং ব্যবস্থা গ্রহণ করার
মাধ্যমে লালন পালন করতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পরে মাছের সাইজ অনুসারে অল্প
অল্প করে মাছ পুকুরে ছাড়তে হবে। তাহলে আপনি মাছ চাষ করে লাভবান হবেন।
পুকুরে মাছ ছাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে : পুকুরের সাইজ বিবেচনা
করে পুকুরে মাছ ছাড়তে হবে। কারণ পুকুরে জায়গার তুলনায় মাছের পরিমাণ যদি বেশি
হয়ে যায় তাহলে মাছের বৃদ্ধি জনিত ব্যাঘাত ঘটে। পুকুর কি পরিমান জায়গার উপরে
খনন করা হয়েছে এবং কত সময়ের জন্য পুকুরে মাছ রাখা হবে সেই সমস্ত বিষয়গুলো
খেয়াল রেখে পুকুরে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাছ ছাড়তে হবে। বেশি মাছ পুকুরে ছাড়লে
বেশি লাভবান হওয়া যাবে এ ধারণাটি ভুল। তাই সঠিক ফলন পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট
পরিমাণ মাফিক মাছ হিসাব করে ছাড়তে হবে।
মাছের জাতের সঠিক নির্বাচন : আপনি কোন জাতের মাছ পুকুরে চাষ করবেন তা
আগে নির্ধারণ করতে হবে। ভালো জাতের মাছ চাষ করলে ভালো ফলন পাবেন এটা স্বাভাবিক।
তাই মাছ নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাছের ভাল জাত লক্ষ্য করতে হবে। মিশ্র মাছ চাষ করতে
হলে মাছের জাত নির্বাচন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কারণ মিশ্র মাছ চাষে পুকুরে অনেক প্রজাতির মাছ থাকার কারণে কোন প্রকারের মাছের
জাত কতটা দিতে হবে সেটা ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হয়। পুকুরে শুধুমাত্র কয়েক
প্রজাতির মাছ চাষ করলে মাছের জাত সম্পর্কে তেমন গুরুত্ব না দিলেও, মিশ্র পদ্ধতিতে
মাছ চাষ করার জন্য অবশ্যই মাছের জাত বিবেচনা করতে হবে।
আমরা জানি পুকুরের কয়েকটি স্তর থাকে এবং প্রতিটি স্তরে আলাদা আলাদা মাছ থাকে।
এজন্য পুকুরের স্তর বিবেচনা করে কোন স্তরে কয়টি মাছ এবং কোন জাতের মাছ ছাড়বেন
তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতিতে পানির গুনাগুন বজায় রাখতে হবে : সকল
পরিকল্পনা মাফিক কৌশলগত ভাবে আপনি পুকুরে মাছের জাত বিবেচনা করে মাছ ছাড়লেন
কিন্তু পানির গুনাগুন ভালো না হওয়ার কারণে ভালো ফলন পাবেন না। ভালো পানি ছাড়া
মাছ পানিতে ভালোভাবে অক্সিজেন নিতে পারে না ফলে অনেক মাছ মারা যায়। এজন্য পানি
ভালো রাখতে হলে আপনাকে পানিতে চুন ব্যবহার করতে হবে একজন ফিশারিজ এর পরামর্শ
মোতাবেক।
পানি পরীক্ষা করার জন্য বর্তমানে একটি কিট বের হয়েছে। এই টেস্ট কিট এর সাহায্যে
পানির গুনাগুন কেমন রয়েছে তা আপনি পরীক্ষা করতে পারবেন। এজন্য প্রত্যেক মাছ
চাষীর কাছে পানি পরীক্ষা করার জন্য টেস্ট কিট থাকা আবশ্যক।
সঠিক খাবারের ব্যবহার : মাছ চাষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়
মাছের খাবারের খাতে। মাছের খাবারের ক্ষেত্রে সঠিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার
নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি নিজেই মাছের খাবার তৈরি করতে পারেন তাহলে
আপনার খরচ কমবে। এছাড়াও বাজারে অনেক ভালো ভালো ব্র্যান্ডের মাছের খাওয়ার কিনতে
পাওয়া যায়, সেগুলো আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
মাছের খাবারের ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালে, বর্ষাকালে এবং শীতকালে কোন ধরনের খাবার
প্রয়োগ করতে হবে তা একজন ফিসারিস এর কাছে ভালোভাবে জেনে নিবেন। কারণ যেহেতু
খাবার নির্বাচনে আপনার খরচ বেশি সেহেতু খাবার বিবেচনার ক্ষেত্রে আপনাকে গুরুত্ব
দিতে হবে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য।
মাছকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার দিতে হবে। মাছের যে পরিমান খাবার প্রয়োজন আপনি যদি
তার থেকে কম খাবার দেন তাহলে মাছের ফলন ভালো হবে না। আবার আপনি যদি প্রয়োজনের
তুলনায় পুকুরে বেশি খাবার প্রয়োগ করেন তাহলে আপনার খরচ বৃদ্ধি পাবে ফলে আপনার
অনেক লোকসান হয়ে যাবে।
মাছকে অবশ্যই নিয়মিত খাবার প্রদান করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে সময় নির্ধারণ করে
সেই সময় খাবার প্রয়োগ করতে হবে। সঠিকভাবে মাছ খাবার না পেলে মাছ বড় হবে না। আর
মাছ বড় না হলে আপনি লাভবান হতে পারবেন না। তাই সফল হতে হলে মাছের খাবার অত্যন্ত
গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে পুকুরে খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
সময়ের সাথে সাথে মাছের ওজন পরীক্ষা করা : আপনি মাছকে খাবার দিচ্ছেন
পরিচর্যা করছেন কিন্তু মাছের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে না, তাহলে আপনাকে আপনার
পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ মাছের ওজনের সাথে খাবারের সম্পর্ক রয়েছে।
ছোট মাছের খাবারের পরিমাণ একরকম হবে আবার বড় মাছের খাবারের পরিমাণ অন্যরকম হবে।
মাছের ওজনের উপর ভিত্তি করে খাবারের পরিমান পরিবর্তন করতে হবে।
মাছের স্বাস্থ্য : আপনি কষ্ট করে পরিকল্পনা মাফিক মাছ চাষ করছেন
কিন্তু মাছের স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে না, এর মূল কারণ হলো মাছ পরীক্ষা না করা।
আপনাকে প্রতি মাসে মাসে জাল টেনে পুকুরের মাছ পরীক্ষা করতে হবে। আপনি যেই
পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হচ্ছেন সেই পরিকল্পনা মাফিক মাছ পাচ্ছেন কিনা তা
পরীক্ষা করার জন্য অবশ্যই জাল টানতে হবে।
জাল টানার সময় যদি মাছের স্বাস্থ্য জনিত কোন সমস্যা দেখতে পান তাহলে অবশ্যই সেই
মাছ গুলোকে আলাদা করে রাখবেন। আলাদা করে মাছগুলো একজন ভালো ফিশারিজকে দেখিয়ে
পুকুরে ঔষধ প্রয়োগ করবেন। যে মাছ গুলো আলাদা করে রেখেছেন সেই মাছ গুলো যদি
পুকুরে ছাড়ার উপযুক্ত মনে হয় তাহলে পুকুরে ঔষধ প্রয়োগ করে তারপরে সেই মাছ
গুলো ছাড়বেন।
পুকুরে সার প্রয়োগ করা : পুকুরে মাছের ভালো ফলন পেতে হলে, পুকুরে
সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করা ভালো নয়। পুকুরে
প্রাকৃতিকভাবে জৈব সার তৈরি হয় এবং এ সমস্ত জৈব খাবার সমূহ মাছ খেয়ে থাকে। তবে
পুকুরে যদি খাবারের ঘাটতি দেখা দেয় তখন সার প্রয়োগ করা বাধ্যতামূলক। পুকুরে
খাবার থাকা অবস্থায় যদি সার প্রয়োগ করেন তাহলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে
পারে এবং মাছ মারা যেতে পারে। এজন্য সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে
হবে।
বিষ্ঠার ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে : অনেক মাছ চাষীকে দেখতে পাওয়া
যায় যারা পুকুরে বিষ্ঠা ব্যবহার করে, এই বিষ্ঠার আরেক নাম পোল্ট্রি লিটার।
পোল্ট্রি লিটারে প্রচুর পরিমাণে কাঠের গুড়া দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন
ময়লা, ধানের তুষ পোল্ট্রি লিটারের মধ্যে থাকে।
এজন্য এ সমস্ত খাবার খাওয়ার পরে মাছের পেটের সমস্যার কারণে মাছ মারা যায়। আবার
পুকুরের পানি খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণে, পুকুরের পানি পরিষ্কার করার জন্য খরচের
পরিমাণ বেড়ে যায়। এজন্য মাছ চাষীদের পোল্ট্রি লিটার বা বিষ্ঠা ব্যবহার না করাই
উত্তম।
এ সমস্ত বিষ্ঠা জাতীয় খাবার পুকুরে দেওয়ার ফলে পুকুরে অ্যান্টিবায়োটিকের
পরিমাণ বেড়ে যায়। এই অ্যান্টিবায়োটিক গুলো মাছের অনেক ক্ষতিসাধন করে। অনেকে
মনে করেন পোল্ট্রি লিটার দিলে মাছের খাবারের ঘাটতি পূরণ হয়। কিন্তু এটা একদমই
ভুল।
পুকুরে ঔষধ প্রয়োগ করা : অনেক সময় সকল দিকনির্দেশনা মেনে
মাছ চাষ করলেও পুকুরে সমস্যা দেখা দেয়। আর পুকুরে সমস্যা দেখা দিলে মাছেরও
সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য সর্বপ্রথম পুকুরের সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। সমস্যা
চিহ্নিতকরণের পরে পানি এবং মাছ পরীক্ষা করতে হবে। মাছের পুষ্টিগুণ এর অভাব হলে
ঔষধ আলাদা, আবার পানির সমস্যা হলে ঔষধ আলাদা হবে। এজন্য পুকুরে সমস্যার
কারণে কি ঔষধ প্রয়োগ করবেন তা একজন ফিশারিজ এর কাছ থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে
জেনে নিন।
পরপর মাছধরা থেকে বিরত থাকতে হবে : অনেক মাছ চাষীকে দেখতে পাওয়া
যায় যারা কোন বিরতি না দিয়ে কয়েকদিন পরপর জাল টেনে মাছ ধরে। এভাবে প্রতিদিন বা
কয়েকদিন পরপর জাল টেনে মাছ ধরলে মাছের শরীরে প্রচুর আঘাত পাওয়ার কারণে মাছ
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপরে সে মাছগুলো খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে মাছের ওজন
কমে যায় এবং মাছের বৃদ্ধি জনিত ব্যাঘাত ঘটে। এজন্য অবশ্যই বিরতি দিয়ে দিয়ে
পুকুর থেকে মাছ মারতে হবে।
সঠিক বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে : পুকুরে মাছ ধরা থেকে শুরু
করে বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত যে কার্যকলাপ গুলো পালন করা হয় তাকে বলা হয়
বাজারজাতকরণ। মাছ বাজারজাতকরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পরিবহন।
পরিবহনের সময় মাছগুলো এমনভাবে রাখতে হবে যেন মাছের কোন আঘাত না লাগে।
বাজারজাতকরণে আঘাত পাওয়া মাছের দাম পাওয়া যায়না।
মাছের চেহারার উপর নির্ভর করে অনেক সময় মাছের দাম পাওয়া যায়। আপনি সঠিকভাবে
মাছ পরিচর্যা করেছেন কিন্তু মাছের শরীর ভালো না হলে, সেই মাছ থেকে আপনি যা দাম
চেয়েছিলেন সেই দাম পাবেন না। কারণ অনেক সময় মাছের চেহারা দেখেও মানুষ বুঝতে পারে
কোন মাছগুলো ভালো।
ট্যাংকে কি কি মাছ চাষ করা যায়?
যাদের পুকুর খনন করার জায়গা নেই তারা বাড়ির উঠানে অথবা যে কোন ফাঁকা জায়গায়
আধুনিক পদ্ধতিতে ট্যাংকে মাছ চাষ করতে পারবেন। ট্যাংকে কি কি মাছ চাষ করা যায় সে
বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। এ সমস্ত ট্যাংক গুলোতে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় রঙিন
মাছগুলো। অনেক সৌখিন মানুষ রয়েছে যারা এই সমস্ত মাছগুলো একুরিয়ামে রেখে
সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কিনে নেই। ট্যাংকে মাছ চাষ করে বর্তমানে অনেকে লাভবান
হচ্ছেন কারণ ট্যাংকে মাছ চাষ করলে, ট্যাংকের এক একটি মাছ অনেক উচ্চ মুল্যে বিক্রি
করা যায়।
আপনি পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি সমুহ প্রয়োগ করেও ট্যাংকে মাছ চাষ করতে
পারবেন। উচ্চ মূল্যের মাছ চাষের জন্য বর্তমানে অনেক বেকার যুবক ট্যাংকে মাছ চাষ
করার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। ট্যাংকে মাছ চাষ করে আপনি শুধু একুরিয়াম ফিস বা রঙিন
মাছ চাষ করতে পারবেন বিষয়টা এমন নয়। আপনি ট্যাংকে সব ধরনের মাছ চাষ করতে পারবেন
তবে রঙিন মাছগুলো চাষ ভালো হয়। এখানে আপনি চিংড়ি জাতীয় মাছ চাষ করতে পারবেন
খুব সহজেই। আর আমরা জানি চিংড়ি জাতীয় মাছের দাম কতটা বেশি।
মাছ চাষের জন্য কোন পদ্ধতি ভালো?
মাছ চাষের জন্য কোন পদ্ধতি ভালো তা অনেকেই জানতে চান। বর্তমান সময়ে পুকুরে মাছ
চাষের আধুনিক পদ্ধতি বা বলা যায় মাছ চাষের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাল পদ্ধতি হচ্ছে
আইপিআরএস প্রযুক্তি। আইপিআরএস প্রযুক্তিতে মাছ চাষের ফলে মাছ ব্যবসায়ীদের মাছ
চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে
এই প্রকল্পটি সর্বপ্রথম হাতে নেওয়া হয়।
আইপিআরএস প্রকল্পটি মূলত চীনদের তৈরি করা একটি প্রকল্প। বাংলাদেশের সাথে চীনের
অনেকদিন ধরেই কৃষিখাতে উন্নয়নের জন্য সরকার পরিকল্পনামা হাতে নিয়েছে। এই
পরিকল্পনামায় বলা রয়েছে বাংলাদেশের যে সমস্ত খাত সমূহ উন্নয়ন করা সম্ভব এ
সমস্ত খাত সমূহে নতুন আধুনিক চীনা প্রযুক্তি যদি ব্যবহার করে লাভবান হওয়া যায়
তবে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে সেই প্রজেক্টে ইনভেস্ট করার।
আইপিআরএস প্রযুক্তি হচ্ছে, যত ধরনের উন্নত যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তি রয়েছে
সবকিছু ব্যবহার করে একটি পুকুরকে মাছের জন্য উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা। এই কৌশলের
মাধ্যমে আপনি যদি মাছ চাষ করেন তাহলে আপনার বিপুল পরিমাণে জায়গার প্রয়োজন হবে
না। আপনি অল্প জায়গাতে বেশি পরিমাণে মাছ চাষ করতে পারবেন।
পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতিতে এরেটর মেশিনের কাজ কি?
পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতিতে এরেটর মেশিনের কাজ কি এই বিষয়ে অনেকেরি ধারনা
নেই। মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতিতে এরেটর মেশিন ব্যবহার করা হয়। এরেটর পদ্ধতি
সর্বপ্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই প্রযুক্তি বর্তমানে
বাংলাদেশে চলে এসেছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আগের চেয়ে কৃষক মাছ চাষীরা
ব্যাপক মাছ উৎপাদন করছে।
এরেটর এমন এক ধরনের মেশিন যে মেশিনের সাহায্যে পুকুরে স্রোতের সৃষ্টি করা যায়।
এই মেশিনের সাহায্যে পানি ওলটপালট হয় বলে পানিতে থাকা যত জীবাণু ক্ষতিকর বিষাক্ত
পদার্থ থাকে সব দূর হয়ে যায়। ফলে পুকুরের প্রতিটি স্তরে অক্সিজেনের সরবরাহ
বেড়ে যায়।
আমরা জানি দিনের বেলায় পুকুরে অক্সিজেনের সরবরাহ বেশি থাকে। কারণ দিনের বেলায়
সূর্যের আলো থাকে। অপরদিকে রাতের বেলায় অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, কারণ পুকুরে
যেই সালোকসংশ্লেষণ বা ছত্রাক থাকে তারা অক্সিজেন টেনে নেয়।
এরেটর মেশিনের ব্যবহারের ফলে আপনি রাতের বেলাতেও আপনার পুকুরে অক্সিজেনের সরবরাহ
বাড়াতে পারবেন। আমরা জানি মাছের দৈহিকবৃদ্ধি গঠনে পুকুরে অক্সিজেনের সরবরাহ কতটা
গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার পুকুরের জন্য কোন ধরনের এরেটর প্রয়োজন তা জানার জন্য একজন ভালো দক্ষ
ফিশারিজ এর কাছে শরণাপন্ন হন অথবা মাছের ট্রেনিং সেন্টারে যোগাযোগ করে সাহায্য
নিন।
মৎস চাষ বিদ্যা কে কি বলে?
ভূগোল বইতে আমরা পড়েছি মৎস্য চাষ বিদ্যাকে বলা হয় পিসিকালচার। আধুনিক পদ্ধতিতে
মাছ চাষ করতে হলে আপনাদের পিসিকালচার শিখতে হবে, মৎস্য চাষ বিদ্যা না জানা থাকলে
মাছ চাষ করে আপনি সুবিধা পাবেন না এবং লাভবান হতে পারবেন না। যেকনো কিছু করার
পূর্বে আপনাকে সেই বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আশা করছি মৎস চাষ বিদ্যা
কে কি বলে জানতে পেরেছেন।
মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি
পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি গ্রহন করে মিশ্র মাছ চাষ করলে একসাথে অনেকগুলো
মাছ চাষ করা যায়। যার ফলে মাছ চাষ করে অনেক লাভবান হওয়া যায়। এজন্য বর্তমানে
সকলেই মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
অর্থাৎ মিশ্র মাছ চষের পদ্ধতি হলো একই পুকুরে অনেক ধরনের মাছ চাষ করাকে বোঝায়।
পুকুরে অনেকগুলো স্তর থাকে। প্রতিটি স্তরে আলাদা আলাদা মাছ বসবাস করে। প্রত্যেক
স্তরের মাছ প্রত্যেক স্তরের খাবার খায় না। এজন্য পরিকল্পনামাফিক প্রতিটি স্তরের
মাছ ছাড়ার পরে প্রতিটি স্তরের খাবার সঠিকভাবে দেওয়ার মাধ্যমে খুব সহজে মিশ্র
মাছ চাষ গ্রহণ করে লাভবান হওয়া যায়।
কিছু কিছু মাছ রয়েছে যে সমস্ত মাছগুলো পুকুরের প্রত্যেকটি স্তরে চলাফেরা করে। এ
সমস্ত মাছগুলো নিধন না করা পর্যন্ত আপনি মিশ্র মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ
করতে পারবেন না। মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রধান উদ্দেশ্য হল পুকুরে
সর্বস্তরে যথাযথ মাছ প্রয়োগ করে প্রত্যেক স্তরকেই সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
মিশ্র মাছ চাষে যেহেতু প্রত্যেকটি স্তরেই মাছ থাকে সেহেতু পুকুরের প্রত্যেকটি
স্তরে পানি ভালো থাকে। কারণ প্রত্যেকটি স্তরের খাবার প্রত্যেকটি স্তরের মাছ খেয়ে
নেই। ফলে পুকুরে ময়লা জমার সম্ভাবনা কম থাকে।
যারা মিশ্র মাছ চাষ করতে চায় তাদের জন্য সাধারণত বড় পুকুর নির্বাচন করা ভালো।
কারণ যেহেতু মিশ্র মাছ চাষ করার ফলে পুকুরে অনেক ধরনের মাছ থাকে তাই বড় পুকুর
নির্বাচন করা উত্তম। অবশ্য লক্ষ্য রাখতে হবে সেই পুকুরে যেন বছরে অন্তত ৮ মাস
পানি থাকে এবং সেই পুকুরের গভীরতা থাকা উচিত। পুকুরের আশেপাশে বড় বড় গাছপালা
থাকলে তা কেটে ফেলতে হবে কারণ পাতা পুকুরে পড়লে পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে যাবে।
পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ করার পূর্বে পুকুরের সমস্ত মাছ নিধন করতে হবে। বিশেষ করে
রাক্ষসী মাছ যদি থাকে তাহলে আপনি কখনোই মিশ্র মাছ চাষ করতে পারবেন না। এজন্য
আপনার প্রথম কাজ হবে রাক্ষসী মাছগুলোকে নিধন করা। পুকুরের পাড় সমূহ সুন্দর করে
বেঁধে মেরামত করতে হবে।
পোনা মাছ চাষ পদ্ধতি
পুকুরে মাছ চাষে ভালো ফলাফল পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে পোনা মাছ চাষ পদ্ধতির
মাদ্ধমে ভালো পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়তে হবে। এজন্য আপনাকে কিছু পদ্ধতি
অবলম্বন করতে হবে আমি তা নিচে দিয়ে দিচ্ছি।
হ্যাচারি নির্বাচন : ভালো পোনা নির্বাচন করতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম
পোনা সমূহ ভালো হ্যাচারি থেকে কিনে লালন পালন করতে হবে। এরপরে পোনা যখন একটু বড়
হবে তখন চাষের পুকুরে সেই পোনা গুলো ছাড়তে হবে।
রেনু পোনা নির্বাচন : ভালো হ্যাচারিতে যোগাযোগ করে ভালো রেনু পোনা
সংগ্রহ করতে হবে। এই সংগ্রহকৃত পোনা প্রথমেই চাষ করার পুকুরে দেওয়া যাবে না। এই
পোনা গুলো একটু বড় না হওয়ার পর্যন্ত অন্য পুকুরে লালন পালন করতে হবে। তবেই আপনি
রেনু পোনা থেকে ভালো লাভবান হবেন।
রেনু পোনার জন্য পুকুর : যেহেতু রেনু পোনা খুব ছোট হয় সেহেতু পুকুর
নির্বাচনের ক্ষেত্রে পুকুর ছোট হওয়াই ভালো। আবার পুকুর যদি অগভীর হয় তাহলে
রেনুর পোনার চাষ ভালো হয়। যেহেতু রেনু পোনা এই পুকুরে শেষ পর্যন্ত থাকবে না
সেহেতু এই পুকুর শুধুমাত্র রেনু চাষ করার জন্য রাখতে হবে আলাদাভাবে।
পুকুরের পাড় সমূহ ভালোভাবে বেঁধে নিতে হবে। পুকুরে যেন সব সময় রোদ থাকে সে
ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ পুকুরের রোদ না লাগলে মাছ অক্সিজেন পাবে না। পুকুরের
সাইজ অনুযায়ী গ্রীষ্মকালে এবং বর্ষাকালে গভীরতা কেমন হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।
চুন ব্যবহার করতে হবে : পুকুরের তলদেশে পাতা ময়লা আবর্জনা থাকে।
লাঙ্গল দিয়ে এই সমস্ত ময়লা আবর্জনা দূর করে ফেলতে হবে। পুকুর সম্পন্ন পরিষ্কার
করার পরে পুকুরে সার বা চুন ব্যবহার করতে হবে। তাহলে পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে
খাবার থাকবে এবং পোনা মাছ খুব তাড়াতাড়ি বড় হবে।
সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা : রেনু পোনা চাষের ক্ষেত্রে পানি অবশ্যই ভালো
থাকতে হবে। এজন্য পুরনো পানি তুলে ফেলার পরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। এরপরে ভালো
পরিষ্কার পানি পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।
পানির ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ গুলো মেরে ফেলতে হবে : পানির কালার যখন সবুজ
হয়ে যাবে তখন বুঝতে হবে পানিতে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ জন্ম নিয়েছে। এই সমস্ত ক্ষতিকর
কীটপতঙ্গ মেরে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। একজন ভালো ফিশারিজের পরামর্শ অনুযায়ী
পানি পরীক্ষা করে পুকুরে সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সঠিক রেনু পোনার মজুদ : আপনি উপরের সবকিছু সঠিকভাবে পালন করলেন
কিন্তু সঠিক রেনু পোনা মজুদ করলেন না তাহলে আপনার সকল পরিকল্পনা বিফল হয়ে যাবে।
এজন্য রেনু পোনার মজুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। রেনু পোনা
মজুদের সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যেন পরিবহনের সময় রেনু পোনার কোন ক্ষতি না
হয় এবং যার মধ্যে রেনু পোনা থাকবে সেখানে যেন অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকে।
মাছ চাষের বই
পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি শেখার বই |
ডঃ মুহাম্মদ নুরুল হুদা আল মামুনের বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ বই। |
শচীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জিওল মাছ বই। |
মিজানুর রহমানের আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ বই। |
ডঃ মোঃ মনিরুজ্জামান এর মাছের রোগ ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা বই। |
মৃত্যুঞ্জয় রায়ের পুকুরে মাছ চাষ বই। |
ডক্টর মাহবুব আলমের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ বই। |
ডঃ মাহবুব আলমের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ বই। |
ডঃ শাহাবুদ্দিন খানের দিতে মাছ চাষ বই। |
মোহাম্মদ কবির আহমেদের বাগদা ও গলদা চিংড়ি চাষ বই। |
অমল বিশ্বাসের সহজ পদ্ধতিতে মাছ চাষ বই। |
মাছ চাষ প্রশিক্ষণ
মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি জানতে মাছ চাষ প্রশিক্ষণ জরুরি। বর্তমানে প্রতিটি
বিভাগের প্রতিটি জেলায় মাছ চাষের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এজন্য আপনাকে
যোগাযোগ করতে হবে স্থানীয় কৃষি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দপ্তরে। সেখান থেকে আপনি তথ্য
পাবেন কিভাবে মাছ চাষের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন মৎস্য অধিদপ্তর কেন্দ্র থেকে।
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় মৎস্য অধিদপ্তর কেন্দ্র রয়েছে। এই মৎস্য অধিদপ্তর
কেন্দ্র বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য ফ্রি মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
হাতে নিয়েছে। ফলে বর্তমানে অনেক যুবক এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ করে
স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
FAQ: পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন
পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি কী?
পুকুরে মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত প্রযুক্তি এবং পরিকল্পনা ব্যবহৃত হয়, যার মাধ্যমে কম খরচে বেশি মাছ উৎপাদন করা যায়।
পুকুরে মাছ চাষের জন্য কোন পরিকল্পনা দরকার?
একটি সফল মাছ চাষের জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন, যার মধ্যে মাছের জাত নির্বাচন, পুকুর খনন, মাছ রাখার সময়কাল এবং বাজারজাতকরণের কৌশল অন্তর্ভুক্ত থাকে।
পুকুরে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন কিভাবে করা উচিত?
পুকুর খননের সময় পরিবেশ, পানির স্তর, গভীরতা এবং পানি সরবরাহের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে।
এরেটর মেশিন পুকুরে মাছ চাষের ক্ষেত্রে কি ভূমিকা রাখে?
এরেটর মেশিন পুকুরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় এবং পানির জীবাণু দূর করে, যা মাছের শারীরিক বৃদ্ধি সহায়ক করে।
পুকুরে মাছ চাষে নার্সিং ব্যবস্থা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মাছ চাষে অভিজ্ঞ না হলে হ্যাচারি থেকে আনা মাছ সরাসরি পুকুরে ছাড়লে অনেক মাছ মারা যায়। এজন্য নার্সিং ব্যবস্থা প্রয়োজন।
মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি কী এবং এটি কিভাবে লাভজনক হতে পারে?
মিশ্র মাছ চাষে একই পুকুরে একাধিক প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়, যা পুকুরের সম্পূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে লাভ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
পুকুরে মাছের সঠিক পরিমাণ কিভাবে নির্ধারণ করবেন?
পুকুরের সাইজ এবং মাছের জাত নির্বাচন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে মাছ পুকুরে ছাড়তে হবে, যাতে মাছের বৃদ্ধি ব্যাহত না হয়।
পুকুরে মাছের খাবারের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ন?
মাছের খাবারের পুষ্টিগুণ এবং পরিমাণ নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের পরিমাণ মাছের ওজন এবং সাইজ অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হবে।
পুকুরে পানির গুনাগুন কিভাবে বজায় রাখা যায়?
পুকুরের পানি পরীক্ষা করে চুন প্রয়োগ এবং অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করে পানির গুনাগুন বজায় রাখা প্রয়োজন, যাতে মাছ সুস্থভাবে বৃদ্ধি পায়।
ট্যাংকে কি ধরনের মাছ চাষ করা যায়?
ট্যাংকে সাধারণত রঙিন মাছ, চিংড়ি এবং অন্যান্য উচ্চ মূল্যের মাছ চাষ করা যায়, যা লাভজনক হতে পারে।
শেষ আলোচনা
সর্বোপরি আমরা বলতে পারি আধুনিক পদ্ধতিতে পুকুরে মাছ চাষ করার জন্য একটি সঠিক
পরিকল্পনা এবং কলাকৌশল গ্রহণ করতে হবে। মাছ এনে পুকুরে ছাড়বেন এবং সেখান থেকে
আপনার অনেক ইনকাম হবে এই আশা বাদ দিতে হবে । পরিশ্রম ব্যতীত কোন কিছুই পাওয়া
সম্ভব নয়। এজন্য আপনি যদি ভালো ফলাফল পেতে চান তাহলে আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে
আপনার পরিকল্পনা এবং কৌশল সমূহ মেনে চলার মাদ্ধমে।