শৈত্যপ্রবাহ কখন হয় ও কত দিন থাকে?


শৈত্যপ্রবাহ কখন হয় ও কত দিন থাকে সে সম্পর্কে জানতে এই আর্তিকেলটি পড়ুন। শৈত্যপ্রবাহ হল একটি আবহাওয়া পরিস্থিতি যেখানে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এটি সাধারণত শীতকালে ঘটে এবং একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়া কয়েকদিন যাবত বিরাজমান থাকে।
শৈত্যপ্রবাহ-কখন-হয়-ও-কত-দিন-থাকে

পোস্ট সূচিপত্রঃ শৈত্যপ্রবাহ কখন হয় ও কত দিন থাকে?

শৈত্যপ্রবাহ কখন হয় ও কত দিন থাকে?

বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহ কখন হয়?

বাংলাদেশে শীতকালের (ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি) সময় পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ ঘটে। বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহ এই ২ মাসের মধ্যে বেশি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে শৈত্যপ্রবাহ হতে দেখা যায়। অর্থাৎ মোটের উপরে আড়াই মাস সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের উপর শৈত্যপ্রবাহ ধাপে ধাপে বয়ে যায়। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি বা কোন কোন ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ঠাণ্ডা শীতল বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে দেশের তাপমাত্রা দ্রুত কমিয়ে দেয়।

শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার কারণঃ
  • তাপমাত্রা কমে যাওয়াঃ পৃথিবীর যে স্থানে শীত পড়ে সে স্থানে সূর্য হেলে থাকে, এই হেলে থাকার কারণেই সূর্যের আলো শীত অঞ্চলে কম প্রবেশ করে। ঠিক তখনই তাপমাত্রা যখন বেশি কমে যায় সেই সময় শৈত্যপ্রবাহ হয়।
  • শীতল বায়ু প্রবাহিত হওয়াঃ উত্তরের দিক থেকে শীতল বায়ু প্রবাহিত হওয়ার ফলে তাপমাত্রা যখন ভেসে কমে যায় তখন শৈত্যপ্রবাহ হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ীঃ

যখন দেশের কোনো অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার কম হয়, তখন সেটিকে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়।

তাপমাত্রার মাত্রার উপর ভিত্তি করে শৈত্যপ্রবাহকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়ঃ

যেমনঃ
  • মৃদু শৈত্যপ্রবাহঃ তাপমাত্রা যখন ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তখন তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
  • মাঝারি শৈত্যপ্রবাহঃ তাপমাত্রা যখন ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তখন তাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
  • তীব্র শৈত্যপ্রবাহঃ আর তাপমাত্রা যখন ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে তখন তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
মনে রাখবেন, পরপর তিনদিন প্রচন্ড শীত পড়লে তখনই তাকে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণনা করা হয়।

শৈত্যপ্রবাহ বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে বেশি হয়?

শৈত্যপ্রবাহ সাধারণত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বেশি অনুভূত হয়। যেমনঃ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ। তবে কোন কোন সময় শৈত্যপ্রবাহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও দেখা যায়।


হিমালয়ের পাদদেশ থেকে যে ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হয় তা সর্বপ্রথম ভারতের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিক থেকে সর্বপ্রথম এই ঠান্ডা বাতাস বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে। এজন্য উত্তর ও উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়ে।

বাংলাদেশের যে সমস্ত অঞ্চল নিয়ে এই ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করে তা নিম্নরূপ নিচে দেওয়া হলঃ
  • রাজশাহী
  • রংপুর
  • দিনাজপুর
  • খুলনা 
  • সাতক্ষীরা
  • কুষ্টিয়া এবং যশোর
চলুন এখন জেনে নেই বাংলাদেশের সবচেয়ে শীত প্রধান অঞ্চল গুলোর নামঃ
  • রাজশাহী 
  • রংপুর 
  • দিনাজপুর
  • পঞ্চগড়
  • পাবনা
  • সীতাকুণ্ড
  • সিলেট
  • পার্বত্য চট্টগ্রাম
  • পার্বত্য রাঙামাটি
  • বান্দরবান
  • খুলনা
  • ময়মনসিংহ
  • শ্রীমঙ্গল
  • সাতক্ষীরা 
  • কুষ্টিয়া
  • যশোর
এছাড়া ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু অঞ্চল রয়েছে যে অঞ্চলগুলো ঢাকা বিভাগের পশ্চিমাঞ্চল হিসেবে বিবেচিত, সাধারণত সেই অঞ্চলগুলোতেও শীতের সময় ভালো ঠান্ডা প্রবাহিত হয়।

যেমনঃ
  • মাদারীপুর
  • শরীয়তপুর
  • টাঙ্গাইল
  • ফরিদপুর
  • গোপালগঞ্জ
সাধারণত শীত কোন বছর বেশি পড়বে এবং কোন বছর কম পড়বে তা নির্ভর করে এল নিনো এবং লা নিনার ওপর।


শৈত্যপ্রবাহ কত দিন থাকে?

শৈত্যপ্রবাহ সাধারণত ৩ দিন থেকে ১ সপ্তাহ বা ৮ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে কখনো কখনো তা ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে।

বেশি সময় ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমনঃ
  • আবহাওয়ার ধরণঃ কোনো অঞ্চলে শীতল বায়ুর স্থায়িত্ব বেশি সময় ধরে থাকলে সত্য প্রবাহ বেশি সময় ধরে প্রবাহিত হয়।
  • ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থাঃ সমতলভূমি, পাহাড়ি এলাকা অথবা নদীর কাছাকাছি এলাকায় শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপ ও স্থায়িত্ব বেশি সময় ধরে থাকে।
  • বায়ুপ্রবাহের দিকঃ উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা শীতল বায়ু যতদিন প্রবাহিত হয় শৈত্যপ্রবাহ ততদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।
তাপমাত্রার ওঠানামার ওপর ভিত্তি করে শৈত্যপ্রবাহের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় এবং টিভি অথবা নিউজ চ্যানেলে পাবলিশ করা হয়।

কুয়াশা বেড়ে গেলে শৈত্যপ্রবাহ বাড়ে?

না কুয়াশা বেড়ে গেলে সত্য প্রবাহ বাড়ে না কারণ কুয়াশার সাথে শৈত্যপ্রবাহ কোন মিল নেই। সোর্সঃ আবহাওয়াবিদ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার।


কুয়াশা পড়লে সারাদিন রোদের দেখা পাওয়া যায় না ঠিক এজন্যই দিনের তাপমাত্রার সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মাত্রার স্বাভাবিক পার্থক্য কমে আসে। ঠিক এজন্যই বেশি কুয়াশা করলে বেশি শীত অনুভূত হয়। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ কুয়াশার উপর নির্ভর করে না বরং শৈত্যপ্রবাহ নির্ভর করে তাপমাত্রার উপর।

শৈত্যপ্রবাহের সময় সতর্কতা

এই সময় ঠান্ডা জনিত অনেক ধরনের রোগ দেখা দেয় ,বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের এবং বৃদ্ধদের বেশি রোগ দেখা যায়। তাই এই সময় আমাদের বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। 

যেমনঃ
  • মোটা উলের কাপড় পরিধান করতে হবে।
  • গবাদিপশু থাকলে তাদের মোটা চট দিয়ে ঘা জড়িয়ে দিতে হবে।
  • হালকা উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করতে হবে।
  • শীতের সময় যেহেতু কুয়াশা বেশি করে সেহেতু গাড়ি চলাচলের সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং ধীরে গাড়ি চালাতে হবে।

FAQ: শৈত্যপ্রবাহ কখন হয় ও কত দিন থাকে?

শৈত্যপ্রবাহ কী?

শৈত্যপ্রবাহ হল এমন একটি আবহাওয়া পরিস্থিতি যেখানে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় এবং কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়া থাকে।

বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহ কখন হয়?

সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহ হয়। কখনো কখনো ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেও এটি দেখা যায়।

শৈত্যপ্রবাহ কত দিন স্থায়ী হয়?

শৈত্যপ্রবাহ সাধারণত ৩ দিন থেকে ৮ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে থাকতে পারে।

শৈত্যপ্রবাহের প্রধান কারণ কী?

শৈত্যপ্রবাহের প্রধান কারণ হলো উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা শীতল বাতাস এবং তাপমাত্রার দ্রুত পতন।

বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বেশি হয়?

শৈত্যপ্রবাহ সাধারণত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বেশি হয়। যেমন: রংপুর, রাজশাহী এবং দিনাজপুর।

শৈত্যপ্রবাহের সময় তাপমাত্রা কত হয়?

তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে হলে সেটিকে শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়।

শৈত্যপ্রবাহ কি কুয়াশার কারণে বাড়ে?

না, কুয়াশার কারণে শৈত্যপ্রবাহ বাড়ে না। তবে কুয়াশা থাকলে দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হয়।

শৈত্যপ্রবাহের সময় কী ধরনের সতর্কতা নেওয়া উচিত?

শীতবস্ত্র ব্যবহার করা, হালকা গরম পানিতে গোসল করা, এবং যানবাহন চলাচলের সময় সতর্ক থাকা উচিত।

শৈত্যপ্রবাহের কারণে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?

শৈত্যপ্রবাহে ঠান্ডাজনিত রোগ যেমন সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, এবং শ্বাসকষ্ট বেশি হয়। বয়স্ক এবং শিশুদের ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি দেখা যায়।

শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব বেশি দেখা যায় কেন?

এটি বেশি দেখা যায় কারণ উত্তর থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস সমতলভূমি ও নদীর কাছাকাছি অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url