তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী সমূহ জানা বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়। কারণ বিশ্ব এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। আমরা
জানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বেসামরিক এবং সামরিক মানুষ মৃত্যুবরণ
করেছিল। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৬০ মিলিয়ন সামরিক ও বেসামরিক মানুষের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়া অনেক বছর পার হয়ে গেছে। বর্তমানে পৃথিবীর
জনসংখ্যা দ্বিগুণ।
তাহলে বুঝতে পারছেন এখন যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয় তাহলে কত মানুষ
মৃত্যুবরণ করবে। কিন্তু আসলে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে যাচ্ছে? তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী আমরা কতটুকু জানি? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কুরআনের
আলোকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে হাদিস সমূহ নিয়ে। কারণ পৃথিবীর যত ভবিষ্যৎবাণী
রয়েছে তা কোরআন ১৪০০ বছর আগেই বলে গিয়েছে যা আমরা আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহিউয়াস সাল্লাম এর কাছ থেকে জেনেছি।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী করা কঠিন। কারণ কখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
হবে তা কেউ বলতে পারবে না। তবে কোরআনের আলোকে এমন কিছু ধারণা রয়েছে যে
ধারণাগুলো থেকে আপনি বুঝতে পারবেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কখন হতে পারে।
দেখুন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন দেশে ছোট ছোট অস্থিরতা মূলক
সমস্যা সৃষ্টি হবে এবং এই ছোট ছোট সমস্যা থেকেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে তৃতীয়
বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হবে। অর্থাৎ হঠাৎ করেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে এই ধারণাটি
ভুল। বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই-বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোর
সাথে বিভিন্ন পারমাণবিক যুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছে। তাই এখান থেকেই অনেকে ধারনা করছেন
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়তো শুরু হয়ে যাবে।
কিন্তু আমরা কোন ধারণা নিয়ে চলবো না। আমরা যেহেতু মুসলমান তাই আমরা ইসলাম
কোরাআন এবং আমাদের নবী রাসুলদের ভবিষ্যৎবাণী গুলো জানবো এবং ফলো করব।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী জানার আগে আমাদের কিছু ছোট ছোট
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সমস্যাগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত কারণ এই
সমস্যাগুলো থেকেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করা যায়। যেমনঃ
- অর্থনৈতিক সংঘাত
- জলবায়ু পরিবর্তন
- প্রাকৃতিক কৃত্রিম উপায়ে পরিবেশ পরিবর্তন
- পারমাণবিক যুদ্ধ
- সাইবার যুদ্ধ
- কৃত্রিম উপগ্রহ
- ছোট ছোট আঞ্চলিক সংঘাত (যেমন এখন বাংলাদেশে হচ্ছে)
- রাজনৈতিক অস্থিরতা
- দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি
- আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোর মধ্যে বিরোধ ইত্যাদি।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী
আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে আমাদের শেষ নবী এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভয়ানক ও ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধের কথা বলে গিয়েছেন। যে
বিশ্বযুদ্ধের কথা আমাদের কোরআনেও স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া রয়েছে।
আজকে আমরা সেই মহাযুদ্ধ সম্পর্কেই জানবো যা পৃথিবী ধ্বংসের আগে তৃতীয় মহাযুদ্ধ
নামে পরিচিত।
রাশিয়া এবং ইউক্রেন ইস্যুতে পুরো দুনিয়া এখন বিপদগ্রস্ত। এদিকে ইজরায়েল
ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধ এবং আমেরিকার সাথে বিভিন্ন দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সমস্যা
ধীরে ধীরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীলতা
সহ আরো বেশ কিছু কারণ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কি ইঙ্গিত করছে? আমাদের
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গিয়েছেন
পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বে একটি বড় যুদ্ধের সংগঠিত হবে এবং এই যুদ্ধে পৃথিবীর দুই
তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাবে।
আমরা ইতিমধ্যেই দুটি বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে জেনেছি কিন্তু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ টি
সম্পর্কে আমাদের নবীজি বলে দিয়েছেন-এই বিশ্বযুদ্ধ হবে সবচেয়ে ভয়াবহ। অর্থাৎ
অন্য দুটি বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় এই বিশ্বযুদ্ধ পুরো পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য
করে দেবে তার একমাত্র কারণ হলো পারমাণবিক অস্ত্র।
পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশ যখন অনেক উন্নত হয়ে যাবে, চারিদিকে রঙিন লাইট এবং
মানুষের বসবাস সহজ করার জন্য বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করবে তখনই পৃথিবী
ধ্বংসের শেষ জামানায় চলে আসবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কিভাবে জানব এটাই সেই জামানা?
এটাই সেই জামানা কিনা সে সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের বিশ্বনবী আমাদের কিছু
ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। যেমনঃ
আখেরি জামানার নারীরা এমন এমন পোশাক পরিধান করবে যা খুবই ছোট হবে এবং শরীর দেখা
যাবে। নারীরা অবাধে ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করবে।
বিশ্বে নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে।
মানুষ দিনের চেয়ে ইনকাম কে বেশি প্রাধান্য দিবে।
যখন বায়তুল মুকাদ্দাস এর উত্থান হবে এবং মদিনা এর পতন হবে তখন মহাযুদ্ধ সংঘটিত
হবে।
মহাযুদ্ধের সময় ইস্তাম্বুল বিজিত হবে এবং এর পরে আবির্ভাব হবে দাজ্জালের।
আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলে গিয়েছেন
এই যুদ্ধ হঠাৎ করেই সংঘটিত হবে না। বরং দিনের পর দিন আস্তে আস্তে যুদ্ধ সংঘটিত
করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হবে, আর এই ষড়যন্ত্র দাজ্জাল এবং দাজ্জালের
একটি সংগঠন (যার নাম ইলুমিনাতি) পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দিবে।
মনে রাখতে হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কোন কিয়ামত নয়, তবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
কিয়ামতের একটি বড় আলামত।
আমাদের শেষ নবী বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গিয়েছেন ততদিন
পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতদিন না ফোরাত নদী থেকে স্বর্ণের পাহাড় উদিত
হয়। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ফোরাত নদীতে পানি একদমই নেই অথচ এক সময় এই ফোরাত
নদীতে প্রচুর পানির ছিল। এই স্বর্ণের পাহাড় নেওয়ার জন্য বিশ্বের শক্তিশালী
দেশগুলো যুদ্ধ করবে। এই যুদ্ধে ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জন মারা যাবে। সুতরাং এখান
থেকে বোঝা যাচ্ছে আমরা পৃথিবীর সেই জামানায় আছি।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই যুদ্ধ আসলে কি যুদ্ধ যার কারণে ১০০ জনের মধ্যে
শুধু একজন বেঁচে থাকবে?
আমরা পৃথিবীতে যত যুদ্ধ দেখেছি সেখানে ১০০ জনের মধ্যে খুব জোর পাঁচজন বা ১০ জন
মারা যেতে দেখা গেছে। তাহলে এটাই কি সেই তৃতীয় মহাযুদ্ধ? দেখুন এই যুদ্ধ কখন
সংঘটিত হবে তা কেউ বলতে পারবে না কিন্তু এর অনুমান করা যেতে পারে।
এখানে মনে রাখবেন- (১০০ জন) কাল্পনিকভাবে বা আনুমানিক ধরা হয়েছে।
এছাড়া আমাদের কোরআনে বলা রয়েছে পৃথিবীর ধ্বংসের পূর্বে পৃথিবীর চুম্বকীয়
ক্ষেত্র উল্টে যাওয়ার কারণে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে। এবং বর্তমানে এটি
বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেছে যে পৃথিবী তার সচরাচর চুম্বকীয় ক্ষেত্রে ঠিক ভাবে
ঘুরছে না। অর্থাৎ পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি উল্টে যাচ্ছে। পৃথিবীর এই ঘূর্ণন গতি যদি
চলতে থাকে তাহলে একসময় সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠবে। এবং এটি হঠাৎ করেই সংঘটিত
হবে না, এটি আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে হতে থাকবে।
তৃতীয় মহাবিশ্ব যুদ্ধ সম্পর্কে অনেক ধর্মের মানুষে অনেক ভবিষ্যৎবাণী করেন।
কিন্তু এগুলো সঠিক নয়। অনুমান করে অনেক কিছুই বলা যায় কিন্তু ১০০ টির মধ্যে
সঠিক হয় দুই থেকে তিনটা। অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা ভবিষ্যৎ বাণী
সম্পর্কে যে ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানতে পারি তাদের বিষয়টি তেমনি। তাই আমি
আবারো বলছি তৃতীয় মহা বিশ্বযুদ্ধ কখন হবে তা কেউ বলতে পারবে না।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী সম্পূর্ণ নতুন আপডেট: Source- Sadikur Rahman Huzur by Biborton Media
- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে একটি মহামারী আসবে যে মহামারিতে পুরো বিশ্ব অঞ্চল হয়ে যাবে।
- কোরআনে ভবিষ্যৎবাণীতে বলা রয়েছে সিরিয়া ১২ বছর জুলুম এবং নিপীড়িত থাকবে এরপর ১২ বছর পর সিরিয়া বিজয় লাভ করবে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সিরিয়া 2011 সাল থেকে বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং ২০২৪ সালে সিরিয়া বিজয় লাভ করেছে।
- কোরআনে সুস্পষ্ট ভাবে বলা রয়েছে সিরিয়া বিজয় লাভ করার পরে ফোরাত নদীর পানি কমে যাবে এবং স্বর্ণ বের হবে। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন খবরের মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে ফোরাত নদীর পাশে সুরঙ্গ পাওয়া গেছে এবং এখান থেকে স্বর্ণের মত উপাদান পাওয়া যাচ্ছে।
- যতদিন যাবে তত স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকবে। বর্তমানে স্বর্ণের দাম প্রতিদিন বৃদ্ধি পায় তা আমরা লক্ষ্য করতে পারছি।
- সৌদি আরবের তেলের দাম কমে এবং যাবে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাবে।
- আমাদের রসুলের হাদিস এ সুস্পষ্ট ভাবে বলা রয়েছে এই স্বর্ণের পাহাড়ের জন্য গোটা বিশ্ব লড়াই করবে।
- সম্ভবত এটাই হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রাথমিক ধাপ যা হলো রাশিয়া এবং ইউক্রেন লড়াই। যা ইতে মধ্যে শুরু হয়ে গেছে শুরু হয়ে গেছে।
- রাশিয়ার সঙ্গে সকল বড় বড় মুসলমান দেশের চুক্তি হবে। কিন্তু এই চুক্তিকে ভিত্তি করে অনেক ঝামেলা হবে এবং এই চুক্তি সফল হবে না।
- এরপরেই শুরু হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যা আস্তে আস্তে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট আমাদের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
- প্রতিটি দেশে দেশে পারমাণবিক বোমা নিয়ে লড়াই করবে। এবং সম্পূর্ণ পৃথিবী চল্লিশ দিনের জন্য অন্ধকার হয়ে যাবে এই পারমাণবিক বোমার কারনে। সম্পূর্ণ পৃথিবী আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে নষ্ট হয়ে যাবে।
- এরপর রমজান মাসে বিকট একটি আওয়াজ হবে যে আওয়াজের কারণে অধিকাংশ মানুষ কানে শুনতে পাবে না, অধিকাংশ মানুষ অন্ধ হয়ে যাবে এবং অধিকাংশ মানুষ বোবা হয়ে যাবে।
- এরপর যখন হাজি সাহেবরা হজ করতে যাবে তখন এ সকল হজকারী ব্যক্তিদের কে জবাই করা হবে।
- এরপরে আবির্ভাব হবে ইমাম মাহাদীর এবং পৃথিবীর এই সংকট সম্পন্ন সময়ে মানুষরা তাকে দেখে বুঝতে পারবে যে তিনি ইমাম মাহদী। যিনি জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আসবে। ইমাম মাহাদির নাক খাড়া হবে এবং কপাল ঊষার বড় হবে।
- এরপর ইমাম মাহাদীর আগমনে সকল মুসলমান জাতি এক হবে এবং লড়াই করতে থাকবে। এই লড়াইয়ের সবটুকুতেই মুসলমান জয়ী হবে শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশে।
- এর ছয় বছর পর আবির্ভাব হবে দাজ্জালের। এবং এই দাজ্জাল পৃথিবীতে অবস্থান করবে চল্লিশ দিন। যার প্রথম দিন হবে ৩৬০ দিনের সমান, দ্বিতীয় দিনটা হবে এক মাসের সমান, তৃতীয় দিনটা হবে এক সপ্তাহের সমান।
- এই দাজ্জাল তখন পুরো পৃথিবী শাসন করবে এবং যারা আল্লাহর পথে কাজ করে তাদেরকে মেরে ফেলবে।
- এই দাজ্জালকে শেষ করার জন্য ইমাম মাহদী এর নেতৃত্বে আল্লাহতালা হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই পৃথিবীতে পাঠাবে।
- এই সময় দাজ্জালের ৭০ হাজার বাহিনী হযরত ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ করার জন্য চলে আসবে কিন্তু হযরত ঈসা আঃ এর সামান্য ইশারাতে দাজ্জালের সকল বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাবে।
- এরপর দাজ্জাল পালাবে বাবুল্লুদ নামক একটা স্থানে যেখানে শুধু অস্ত্র এবং অস্ত্র সাজিয়ে রাখা হবে। তেলাপিত থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বাবুল্লুদ।
- কিন্তু তাতেও দাজ্জাল ঈসা আঃ কে কিছুই করতে পারবে না। এবং দাজ্জাল ধ্বংস হয়ে যাবে।
- এরপর ইমাম মাহদী আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবী থেকে বিদায় নিবেন। এবং পৃথিবীতে সকল ইসলামী সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে তিনি বিদায় নিবেন।
- এরপরে আসবে ইয়াজুজ মাজুজ আরব দেশের অশ্লীল কর্মকাণ্ড ধ্বংস করার জন্য।
আজ পর্যন্ত আমাদের কোরআন এবং হাদিস যে সকল তথ্যগুলো দিয়েছে তা একটাও ভুল কেউ
প্রমাণ করতে পারেনি এবং পারবেও না। কারণ এটা সম্পূর্ণই আল্লাহর একটি কিতাব। তাই
কোরআন এবং হাদিসের আলোকে আমরা ভবিষ্যৎবাণী গুলো সম্পর্কে জানব এবং বিভিন্ন গুজব
থেকে নিজেদের দূরে রাখব।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে হাদিস
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে হাদিস গুলো বোঝা আমাদের পক্ষে একটু কঠিন তাই আমরা
এখানে সহজভাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাদিস গুলো আলোচনা করব।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বলেছেন পৃথিবীর সেই জামানায় একটি তৃতীয়
বিশ্বযুদ্ধ হবে। অর্থাৎ দুটি বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পরে শেষ যে বিশ্বযুদ্ধ হবে সে
বিশ্বযুদ্ধে পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাবে। এর মধ্যে অর্ধেক মানুষ মারা
যাবে যুদ্ধের কারণে এবং অর্ধেক মানুষ মারা যাবে দুর্ভিক্ষের কারনে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইমাম মাহাদীর আগমন হবে এবং ইমাম মাহদী পৃথিবীর সকল
ইহুদীদের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন।
ইমাম মাহদী আসার পূর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেকেই নিজেকে ইমাম মাহদী বলে দাবী
করবে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইহুদিরা সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকবে এবং তারা বিশ্ব
শাসন করবে। ইহুদিদের এত ক্ষমতা থাকবে যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে যাবে না বরং
বিভিন্ন দেশ ইহুদিদেরকে সাপোর্ট করবে।
পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন হতে থাকবে এবং বিভিন্ন দেশে অধিক বেশি খরা, বন্যা
দেখা দেবে।
মানুষ খুব সহজেই একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে
অন্য প্রান্তে।
দাজ্জাল তার প্রযুক্তির মাধ্যমে গোটা পৃথিবীকে হাতের মুঠো নিয়ে আসবে।
এই সময় পৃথিবীতে দাজ্জালের একটি বাহিনী তৈরি হবে যার নাম ইলুমিনাতি।
পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের অধিকাংশ মানুষ গোপনে
এই ইলুমিনাতি সংগঠন পরিচালিত করবে এবং বিভিন্ন কৌশলে দাজ্জালের
সিম্বল প্রদর্শিত করবে।
আমেরিকা ইসরাইলের সাথে যৌথভাবে বিশ্ব শাসন করবে এবং সেই দেশে বিয়ের আগেই
যৌনসঙ্গম বেড়ে যাবে।
আরব দেশে মেয়েদের বাইরে অবাধে চলাচল করার জন্য জন্য ফ্রি করে দেওয়া হবে।
আরব দেশে বিভিন্ন বড় বড় অট্টালিকা তৈরি হবে। এবং বর্তমানে আমরা দেখতে পাই আরব
দেশে যেখানে বহু বছর আগেও শুধু মরুভূমি ছিল সেখানে উচ্চ অট্টালিকা তৈরি হয়েছে।
দাজ্জাল নীরবে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ফেতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে।
ইমাম মাহদী আসার পর পুরো বিশ্বের ইলুমিনাতি সদস্য এর মানুষজন বিশেষ করে
ইহুদি আমেরিকার মানুষজন মাহদী বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়বে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হচ্ছে এই পৃথিবীর শেষ বিশ্বযুদ্ধ। কিন্তু এই বিশ্বযুদ্ধের
পরে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে দেশ পুরো পৃথিবী তে হাঙ্গামার চালাবে সেই দেশ
পুনরায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোটা পৃথিবীকে শাসন করবে। যেমন বর্তমানে
আমেরিকা।
ইসরাইল নামের নতুন একটি দেশ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এই দেশটি ফিলিস্তিনি দখল করবে
যা বর্তমানে এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ আমেরিকাকে সাপোর্ট করবে এবং কিছু
সংখ্যক দেশ আমেরিকার ও ইহুদিদের সাথে যুদ্ধ করবে। এটাও আমরা বর্তমানে আস্তে
আস্তে দেখতে পাচ্ছি।
হিটলার গোটা পৃথিবীতে ইহুদীদের সাম্রাজ্য নষ্ট করার জন্য যুদ্ধ করবে কিন্তু সে
কিছু বার সফল হওয়ার পরে ইহুদীদের এবং খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্রের কারণে তাকে
হত্যা করা হবে। এই ঘটনাটি বহু আগেই হয়ে গেছে।
বিশ্বের বড় বড় নাস্তিক ব্যক্তিরা প্রতিটি দেশের উচ্চ পর্যায়ে ক্ষমতা শাসন
করবে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর অনেক ছোট হয়ে আসবে। চোখের পলকে
বছরের পর বছর পার হয়ে যাবে।
মিশরের একজন প্রেসিডেন্ট হবেন যার নাম আনোয়ার সাদআত। মূলত তিনি একজন কালো
ব্যক্তি হবেন যদিও তার পিতা অনেক সুদর্শন একজন ব্যক্তি ছিলেন। আনোয়ার সাদাত এর
মা একটু কালো হওয়ার কারণে আনোয়ার সাদাত কালো হয়েছিলেন। এবং এই সময়
জেরুজালেম ইসরাইলের হাতে চলে যাবে আনোয়ার সাদাতের কারণে। যা ইতিমধ্যেই হয়ে
গিয়েছে।
ইমাম মাহাদী আসার পূর্বে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী স্থান যার নাম
উষ্ণ উপত্যকা,সেখানে একজন ব্যক্তির আবির্ভাব হবে, যিনি ইমাম মাহদীর সহযোগী কালো
পতাকা বাহি দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন।
মূলত এই ব্যক্তির জন্যই বিভিন্ন দেশ থেকে ৩০ হাজার মানুষ যুদ্ধ করার জন্য যাবে।
এই ব্যক্তির চোখে সামান্য আঘাতের চিহ্ন থাকবে, চুলগুলো হবে খোকড়ানো এবং চেহারা
হবে উজ্জ্বল। তার বয়স হবে ৪০ বছরের কম এবং তার পা হবে চিকন লম্বা। সবাই তাকে
অনুসরণ করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেবে। এই ব্যক্তি সমস্ত বাগদাদ এবং এরা
ধ্বংস করে দিবে।
মূলত এই ব্যক্তির সাথে যুদ্ধ করার জন্য তখন ইমাম মাহাদির আগমন হবে। ইমাম
মাহাদীর আগমনের পরে ইমাম মাহাদীকে হত্যা করার জন্য ৭০ হাজার সৈন্য পাঠাবে
এই ব্যক্তি। কিন্তু এই সকল সৈন্যদের আল্লাহতালা বাইদা নামক স্থানে ধ্বংস করে
দিবেন।
এরপরেও মাহাদীর সঙ্গে ওই ব্যক্তি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন এবং একসময় তিনি নিজেই
নিহত হবেন।
ইমাম মাহাদী আসার পূর্বে আমেরিকার একজন রানী প্রেসিডেন্ট থাকবেন এবং তিনি ইমাম
মাহাদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন।
আরব ও ইসরাইল যুদ্ধের পর জেরুজালেম ও মসজিদুল আকসা ইহুদিরা দখল করে নিবেন এবং
ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালাবেন যা বর্তমান পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে।
আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন বড় বড় সংস্থা যেমন ন্যাটো আফগানিস্তানের
উপর আক্রমণ করবে এবং সেই সময় ইউরোপের অধিকাংশ দেশ আমেরিকাকে সমর্থন করবে যা
২০০১ সালে ঘটে গেছে।
কিন্তু আল্লাহতালা এত কিছুর পরেও ইমাম মাহাদীর হাতে এমন ক্ষমতা দান করবেন যার
ফলে পুরো বিশ্ব তাকে দেখে ভয় পাবে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বিভিন্ন বড় বড় দেশদের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে
প্রতিযোগিতা শুরু হবে। অর্থাৎ কে কত বেশী শক্তিশালী তা প্রদর্শনের মাত্রা বেড়ে
যাবে। যা আমরা বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি।
আমরা এই ধারণা থেকে একটু আন্দাজ করতে পারি যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পৃথিবীর
শেষ জামানা দুটি একে অপরের সাথে জড়িত।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলামত কি কি?
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলামত কি কি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমাদের অবশ্যই জানা
উচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যে সমস্ত আনন্দ গুলোর কথা বলা হয়েছে এটি
আসলে একটি ভবিষ্যৎবাণী। অর্থাৎ ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এই ভবিষ্যৎ বাণী গুলো
করা হয়েছে যেগুলোর পরেই সাধারণত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে।
নিম্নে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলামত সমূহ নিতে দেওয়া হলঃ
রাজনৈতিক ও স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক সংঘাতঃ হাদিসে বলা রয়েছে তৃতীয়
বিশ্বযুদ্ধের আলামত হচ্ছে রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক দেশের মধ্যে
সংঘাত সৃষ্টি হবে যা বর্তমানে খুবই পরিলক্ষিত একটি বিষয়। রাশিয়া ইউক্রেন
যুদ্ধ, ইজরাইল ও ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধ, ভারত পাকিস্তান সংঘাত, আমেরিকার সঙ্গে
বিভিন্ন দেশের সুসম্পর্ক এবং বিভিন্ন দেশের খারাপ সম্পর্ক ইত্যাদি সব কিছুরই
ইঙ্গিত হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
হাদিসঃ
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, "তোমরা এমন সময় দেখবে যখন সব রাজত্ব একে অপরের
বিরুদ্ধে লড়বে। পৃথিবী শান্ত থাকবে না।"
(সূত্র: সুনান আবু দাউদ, হাদিস 4291)
অর্থনৈতিক সংকট এবং দারিদ্র্যতাঃ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি বড় আলামত
হচ্ছে অধিকাংশ দেশের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিবে এবং দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি
পাওয়ার কারণে দরিদ্রতা দেখা দিবে।
হাদিসঃ
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, "তোমরা এমন সময় দেখবে যখন অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি
পাবে এবং মানুষ একে অপরকে মারামারি করবে।"
(সূত্র: সুনান তিরমিযি)
বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় বিষয়ে অশান্তিঃ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে সারা
বিশ্বে ধর্মীয় বিষয়ে অশান্তি শুরু হবে যেমন বর্তমানে বাংলাদেশ এবং ভারতে
মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া পাকিস্তানি ভারতের মধ্যে
সম্পর্ক ভালো না থাকার অন্যতম বড় ইস্যু হচ্ছে ধর্মের পার্থক্য।
হাদিসঃ
"মানুষ পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, তবে তাদের মধ্যকার শান্তি ও সহানুভূতি
বিলীন হয়ে যাবে।"
(সূত্র: সুনান আবু দাউদ)
পারমাণবিক বা আধুনিক যুদ্ধের ব্যবহারঃ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে
বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যুদ্ধ শেষ পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং পারমাণবিক বোমার
পরিমাণ বেড়ে যাবে। প্রত্যেকটি দেশ তাদের নিজ নিজ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য এ
সকল পারমাণবিক বোমা গুলো তৈরি করে রাখবে।
হাদিসঃ
"শেষ সময়ে মানুষ এমন যুদ্ধ করবে যার ফলে পৃথিবী প্রায় ধ্বংস হয়ে যাবে।" (এটি
পারমাণবিক বা বিশাল পরিসরের যুদ্ধের ধারণাকে সমর্থন করতে পারে)
ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমনঃ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ইমাম মাহদী
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই পৃথিবীতে আগমন করবে এবং সকল ধরনের আল্লাহর পরিপন্থী
বিরোধী অপকর্মগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন। তিনি সকল মুসলমানদের একাই নেতৃত্ব
দিবেন। মাহাদীর কাছে অনেক বড় বড় দেশ যুদ্ধে হেরে যাবে।
হাদিসঃ
"যুদ্ধের শেষে, আল্লাহ মাহদী (আঃ) কে পাঠাবেন, যিনি পৃথিবীকে শান্তি ও ন্যায়
প্রতিষ্ঠা করবেন।"
(সূত্র: সুনান আবু দাউদ)
দাজ্জালের আগমনঃ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পর ইসলামী বিভিন্ন
হাদিস অনুযায়ী দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে ইমাম মাহাদীর সঙ্গে যুদ্ধ
ঘোষণা করবে। দাজ্জাল পৃথিবীতে আসার পর পৃথিবীতে ব্যাপক ধ্বংস চালাবে।
হাদিসঃ
"দাজ্জাল পৃথিবীতে আসবে এবং সে সমস্ত পৃথিবীকে বিভ্রান্ত করবে, তবে মুসলিমরা
তার বিরুদ্ধে একত্রিত হবে।"
(সূত্র: সিহাহ সিত্তাহ)
পৃথিবীজুড়ে বিপুল প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ পুরো পৃথিবী জুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তন
ঘটবে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
হাদিসঃ
"শেষ সময়ে পৃথিবী থেকে অনেক বিপর্যয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, যা মানুষের
জীবনকে বিপর্যস্ত করে দেবে।"
(সূত্র: সুনান আবু দাউদ)
সভ্যতার পতন এবং সামাজিক অস্থিরতাঃ এই ছন্দের কারণে প্রত্যেকটি
সভ্যতার পতন ঘটবে এবং বিভিন্ন সামাজিকভাবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে।
হাদিসঃ
"সামাজিক অস্থিরতার কারণে মানুষ একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করবে এবং পৃথিবী
অশান্ত হয়ে উঠবে।"
(সূত্র: সুনান ইবনে মাজাহ)
ধর্মীয় নেতাদের দুর্বলতা এবং অপসংস্কৃতিঃ বিশ্বের বড় বড় ধর্মীয়
নেতা যারা রয়েছে তাদের মধ্যে ধর্মীয় দুর্বলতা সৃষ্টি হবে, বিশেষ করে
মুসলমান দেশগুলির বড় বড় নেতা গুলোর মধ্যে এই অপসংস্কৃতি সৃষ্টি হবে।
হাদিসঃ
"শেষ সময়ে ধর্মীয় নেতা বিভ্রান্ত হবে, এবং তারা সত্য থেকে বিচ্যুত হবে, যা
একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘাতের সৃষ্টি করবে।"
(সূত্র: সুনান তিরমিযি)
বড় বড় শক্তিশালী দেশ মুসলমানদের শত্রু হবেঃ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের
আরেকটি সবচেয়ে বড় আলামত হচ্ছে বিশ্বের সব বড় বড় শক্তিশালী দেশগুলো
মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে এবং হত্যাকাণ্ড চালাবে। তারা পুরো মুসলিম
জাতিকে শেষ করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করবে।
হাদিসঃ
"তোমরা এমন একটি যুদ্ধ দেখবে, যেখানে শক্তিশালী দেশগুলো একত্রিত হয়ে
মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।"
(সূত্র: সুনান আবু দাউদ)
মালহামা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি?
মালহামা একটি ইসলামী শব্দ যা শেষ সময়ে সংঘটিত একটি বৃহৎ যুদ্ধকে বোঝায়।
ইসলামী ঐতিহ্য এবং হাদিসগ্রন্থে "মালহামা" বা "মালহামা আল-কুবরা" (The Great
Battle) শব্দটি শব্দটি বলতে বুঝিয়েছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে যা মুসলিমদের
জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যতে আসন্ন ঘটনাকে চিহ্নিত করে।
"মালহামা" শব্দটি আরবি "লহম" (মাংস) থেকে এসেছে, যার আক্ষরিক অর্থ "মাংস
খাওয়া" বা "নরনারী সংঘাত"। এটি একটি দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে বিশাল,
ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী, মালহামা একটি ভয়ানক যুদ্ধ হবে যা পুরো পৃথিবীকে
গ্রাস করবে যা ইসলামের শেষ সময়ের পূর্বাভাসের অংশ। এটি ইসলামী জাহান এবং
বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের মধ্যে হবে, এবং বিভিন্ন শক্তির মধ্যে এক ভয়ানক যুদ্ধের
সৃষ্টি হবে।
মালহামার বৈশিষ্ট্য
মালহামা একটি অত্যন্ত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হবে, যেখানে অনেক মানুষ নিহত হবে এবং
পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে। এই যুদ্ধের পর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে,
তবে এর পরও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।
ইসলামী হাদিসে মালহামার আলোচনা রয়েছে এবং এটি "ফিতনা" বা "অশান্তি" নামে
পরিচিত। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে, এই যুদ্ধটি পৃথিবীকে নেড়ে ফেলবে এবং
মানুষকে বড় পরীক্ষা দিবে।
একাধিক হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, "তোমরা মালহামা দেখবে, এবং তা এমন এক যুদ্ধ হবে যা
তোমরা কখনও দেখনি।"
"যুদ্ধের পর, ইমাম মাহদী (আঃ) পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন।" (এটি
বিভিন্ন হাদিসে এসেছে, যেমন সুনান আবু দাউদ এবং সিহাহ সিত্তাহ তে)
মালহামা কখন ঘটবে?
যদিও কোন নির্দিষ্ট তারিখ বা সময় উল্লেখ করা হয়নি, তবে ইসলামী স্কলাররা
বিশ্বাস করেন যে মালহামা বিশ্বে এক নৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক
উত্তেজনা এবং বৃহৎ পরাশক্তির মধ্যে সংঘর্ষের পরিণতি হিসেবে ঘটতে পারে যা আমি
আই আর্টিকেলে পূর্বেই আলোচনা করেছি।
মালহামা এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাদৃশ্যঃ
বর্তমানে যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিসেবে বর্তমানে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, সেটি
ইসলামিক ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মালহামার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই যুদ্ধের
প্রেক্ষাপট বা পরিস্থিতি ইসলামী শিক্ষায় জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারন এখান থেকে
অনেকেই ইসলাম ও কুরানের ভবিষ্যতবাণী সম্পর্কে জানবে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়
বিশেষত মুসলিম দেশগুলো, একে অপরের বিরুদ্ধে লড়তে পারে।
মালহামা সম্পর্কে ইসলমের বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিকোণঃ
মালহামা বা শেষ সময়ে এই ধরনের যুদ্ধের ব্যাপারে মুসলিম স্কলাররা বিভিন্ন
দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছেনঃ
-
ইসলামের মতে, এই যুদ্ধের শেষে ইমাম মাহদী (আঃ) উপস্থিত হবেন, যিনি
মুসলিমদের নেতৃত্ব দেবেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন।
-
একাধিক হাদিসে এটি বলা হয়েছে যে, যুদ্ধে জয়ী মুসলিমরা বিশ্বে ইসলামের আলো
ছড়িয়ে দেবেন।
মালহামা কিভাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে?
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি ঘটে, তবে এটি বেশ কিছু বৈশ্বিক সংকটের সমষ্টি হতে পারে।
যেমনঃ
- অর্থনৈতিক বৈষম্য
- ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা
- পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়
- প্রযুক্তিগত ও সাইবার আক্রমণ
মালহামার মধ্যে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সঙ্ঘাত, পরবর্তীতে ইসলামের বিজয় এবং
শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। মালহামা হল ইসলামের, কুরআনের এবং
নবীরাসুলদের ভবিষ্যদ্বাণী যা একটি বৃহৎ ও ভয়াবহ যুদ্ধ। মুসলিমদের জন্য শেষ
জামানা সম্পর্কে জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
FAQ: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী | তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
সম্পর্কে হাদিস
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কবে হয়েছিল?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (World War I) ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই শুরু হয় এবং ১১
নভেম্বর ১৯১৮ তারিখে শেষ হয়। এই যুদ্ধটি প্রায় ৪ বছর চলেছিল। এই যুদ্ধে
প্রায় ৬ কোটি ইউরোপীয়সহ মোট ৭ কোটি সামরিক বাহিনীর সদস্য অংশগ্রহণ
করেছিল
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কতজন মানুষ মারা গিয়েছিল?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (World War I) মোট প্রায় ১৭ মিলিয়ন মানুষ মারা
গিয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ১০ মিলিয়ন সৈন্য এবং ৭ মিলিয়ন বেসামরিক
মানুষ নিহত হয়েছিল। আবার আরেকটি সূত্রে পাওয়া যায় - প্রথম
বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১.৫ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ১
কোটি সামরিক এবং ৭০ লক্ষ বেসামরিক মানুষ অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে ধারণা করা
হয়। এছাড়াও প্রায় ২ কোটি মানুষ আহত হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে হয়েছিল?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (World War II) ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়
এবং ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। এটি বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে
বিধ্বংসী এবং ব্যাপক আকারে সংঘটিত যুদ্ধ ছিল, যা প্রায় ৬ বছর স্থায়ী
হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কতজন মানুষ মারা গিয়েছিল?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (World War II) প্রায় ৭০ থেকে ৮৫ মিলিয়ন মানুষ
মারা গিয়েছিল, যা ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। অন্য আরেকটা
সূত্রে জানা যায়- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রায় ৫ কোটি থেকে সাড়ে
৮ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ২.৪ কোটি সামরিক এবং
৩.৮ কোটি বেসামরিক মানুষ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি মানব ইতিহাসের অন্যতম
ভয়াবহ এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
মালহামা কখন হবে?
মালহামা দাজ্জালের আগমনের কিছু সময় পূর্বে শুরু হবে। এই যুদ্ধটি হবে
মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে। পৃথিবীর শেষ জামানায় এই মালহামাটি
দেখা যাবে এবং এই মালহামায় বহু মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। ঠিক কোন সময়ে এই
মালহামাটি সংঘটিত হবে তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারবে না। তবে ইসলামে ধারণা
করা হয় শেষ জামানায় এই মালহামাটি সংঘটিত হবে।
গাজওয়াতুল হিন্দ কি?
গাজওয়াতুল হিন্দ একটি যুদ্ধের নাম। এই যুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের মহানবী
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াস সাল্লাম বলে গিয়েছেন যে একসময়
মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যে একটি যুদ্ধ হবে এবং এই যুদ্ধে মুসলমানরা
জয়ী হবে। এই যুদ্ধের নামই হচ্ছে গাজওয়াতুল হিন্দ। এই যুদ্ধটি সংঘটিত
হবে ভারতীয় উপমহাদেশে। যারা মুসলমানরা এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তারা
মর্যাদাবান শহীদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে কোন কোন দেশ নিরাপদে থাকবে?
কিছু দেশ তাদের ভৌগোলিক অবস্থার কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে সম্পূর্ণ
নিরাপদে থাকবে। দেশগুলোর নাম হচ্ছে- আইসল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড,
গ্রিনল্যান্ড। কানাডা সম্পর্কে বলা কঠিন কারণ কানাডা যেহেতু আমেরিকার
পার্শ্ববর্তী দেশ তাই আমেরিকা চাইলে কানাডাকে সুরক্ষায় রাখতে পারে।
তাছাড়া কানাডা একটি শান্তিপ্রিয় দেশ অর্থাৎ কারো সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়
না। কিন্তু কানাডা যেহেতু আমেরিকার পার্শ্ববর্তী দেশ সে তো কানাডাতেও
যুদ্ধ হতে পারে তবে এর সম্ভাবনা খুবই কম। ইংল্যান্ডে যুদ্ধ হলেও
আয়ারল্যান্ডের যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া তাদের
ভৌগোলিক অবস্থার কারণে রক্ষা পেতে পারে যদিও অস্ট্রেলিয়া নেটওয়ার্ক
সদস্য ভুক্ত কোন দেশ নয় কিন্তু ন্যাটোর যাবতীয় কার্যকলাপের বিষয়ে
সহযোগিতা করে থাকে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
আমি আশা করছি আপনারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী এবং তৃতীয়
বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে হাদিস পরিপূর্ণভাবে জানতে পেরেছেন। দেখুন হাদিসগুলো বোঝা
একটু কঠিন তাই আমি চেষ্টা করেছি সহজ ভাবে হাদিসগুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপনা
করার। আমি সহজ ভাষায় আপনাদের হাদিসগুলো এবং ভবিষ্যৎবাণী দেওয়ার কারণ হলো
আপনারা যেন ইসলাম এবং শেষ জামানা সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারেন।