সরকারি চাকরির গ্রেড কয়টি | সরকারি চাকরির গ্রেড অনুযায়ী বেতন

আপনি কি জানতে চান সরকারি চাকরির গ্রেড কয়টি? এই আর্টিকেলে আপনি সহজভাবে বুঝতে পারবেন সরকারি গ্রেডের সংখ্যা ও তাদের বেতন সম্পর্কে। সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে এটি আপনার জন্য বেশ সহায়ক হবে।

সরকারি-চাকরির-গ্রেড-কয়টি
এখানে থাকছে বাস্তব তথ্য ও আপডেটেড বিশ্লেষণ। আপনি যদি সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখেন, তাহলে এই তথ্যগুলো অবশ্যই কাজে আসবে।

সূচিপত্রঃ সরকারি চাকরির গ্রেড কয়টি | সরকারি চাকরির গ্রেড অনুযায়ী বেতন

এই ব্লগ পোষ্ট থেকে আপনি যে সমস্ত বিষয় জানতে পারবেন তা এক নজরে দেখে নিন-

সরকারি চাকরির গ্রেড কয়টি

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির মোট ২০টি গ্রেড রয়েছে। গ্রেড-১ সবচেয়ে উচ্চ পদ এবং গ্রেড-২০ সবচেয়ে নিচের পদ। আপনি যদি বর্তমানে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন, তাহলে এই তথ্য আপনাকে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। প্রতিটি গ্রেডে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা আলাদা। এটি আপনার ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


এক থেকে নয় পর্যন্ত গ্রাজুয়েটেড কর্মকর্তারা সবচেয়ে বেশি বেতন পায়। এরপরে পর্যায়ক্রমিক ভাবে গ্রেড যত বাড়তে থাকে, বেতন একটু একটু করে কমতে থাকে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যার গ্রেড যত কম হবে তার বেতন তত বেশি হবে।

আবার শ্রেণী অনুযায়ী গ্রেড গুলোকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। যেমনঃ প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী, তৃতীয় শ্রেণী ও চতুর্থ শ্রেণী ।
শ্রেণী অনুযায়ী ২০টি গ্রেড নির্ণয়
প্রথম শ্রেণীর চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরি তৃতীয় শ্রেণীর চাকরি চতুর্থ শ্রেণীর চাকরি
১ম থেকে ৯ম গ্রেডিং পর্যন্ত ১০ম গ্রেডিং ১১ থেকে ১৬ তম গ্রেডিং পর্যন্ত ১৭ থেকে ২০ তম গ্রেডিং পর্যন্ত

সরকারি চাকরির গ্রেড অনুযায়ী বেতন

সরকারি-চাকরির-গ্রেড-অনুযায়ী-বেতন
গ্রেড অনুযায়ী বেতন
গ্রেড সমূহ বেতন স্কেল
১ম গ্রেড ৭৮,০০০ টাকা নির্ধারিত
২য় গ্রেড ৬৬,০০০ থেকে ৭৬,৪৯০ টাকা পর্যন্ত
৩য় গ্রেড ৫৬,৫০০ থেকে ৭৪,৪০০ টাকা পর্যন্ত
৪র্থ গ্রেড ৫০,৫০০ থেকে ৭১,২০০ টাকা পর্যন্ত
৫ম গ্রেড ৪৩,০০০ থেকে ৬৯,৮৫০ টাকা পর্যন্ত
৬ষ্ঠ গ্রেড ৩৫,৫০০ থেকে ৬৭,০১০ টাকা পর্যন্ত
৭ম গ্রেড ২৯,০০০ থেকে ৬৩,৪১০ টাকা পর্যন্ত
৮ম গ্রেড ২৩,০০০ থেকে ৫৫,৪৬০ টাকা পর্যন্ত
৯ম গ্রেড ২২,০০০ থেকে ৫৩,০৬০ টাকা পর্যন্ত
১০ম গ্রেড ১৬,০০০ থেকে ৩৮,৬৪০ টাকা পর্যন্ত
১১তম গ্রেড ১২,৫০০ থেকে ৩২,২৪০ টাকা পর্যন্ত
১২তম গ্রেড ১১,৩০০ থেকে ২৭,৩০০ টাকা পর্যন্ত
১৩তম গ্রেড ১১,০০০ থেকে ২৬,৫৯০ টাকা পর্যন্ত
১৪তম গ্রেড ১০,২০০ থেকে ২৪,৬৮০ টাকা পর্যন্ত
১৫তম গ্রেড ৯,৭০০ থেকে ২৩,৪৯০ টাকা পর্যন্ত
১৬তম গ্রেড ৯,৩০০ থেকে ২২,৪৯০ টাকা পর্যন্ত
১৭তম গ্রেড ৯,০০০ থেকে ২১,৮০০ টাকা পর্যন্ত
১৮তম গ্রেড ৮,৮০০ থেকে ২১,৩১০ টাকা পর্যন্ত
১৯তম গ্রেড ৮,৫০০ থেকে ২০,৫৭০ টাকা পর্যন্ত
২০তম গ্রেড ৮,২৫০ থেকে ২০,০১০ টাকা পর্যন্ত

সরকারি অফিসে কত ধরনের স্টাফ থাকে

সরকারি অফিসে মোট চার ধরনের স্টাফ থাকে। যেমনঃ
  • প্রথম স্তর = BCS ক্যাডার (গেজেটেড কর্মকর্তা)
  • দ্বিতীয় স্তর = প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা (গেজেটেড কর্মকর্তা)
  • তৃতীয় স্তর = প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা গন
  • চতুর্থ স্তর = প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ

সরকারি চাকরির বেতন ও ভাতা

সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা হলেও বেতন-ভাতাসহ এটি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা হয়ে যায়।
সরকারি কর্মকর্তার বেতন ও ভাতা
ভাতার ধরণ পরিমাণ (টাকা) বিবরণ
মূল বেতন ৭৮,০০০ টাকা (সর্বোচ্চ স্কেল) এটি সরকারি চাকরির মূল বেতন স্কেলের সর্বোচ্চ সীমা (গ্রেড ৩ অনুযায়ী)।
বাড়ি ভাড়া ভাতা ৩৯,০০০ টাকা (মূল বেতনের ৫০%) ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরে এটি ৫০%-৬০% পর্যন্ত হতে পারে।
চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা মাসিক ভিত্তিতে নির্ধারিত।
ডোমেস্টিক এইড ভাতা ৩,০০০ টাকা গৃহস্থালির সহায়তার জন্য বরাদ্দ।
উৎসব ভাতা ১৩,০৩৩ টাকা (দুই ঈদের জন্য বছরে দুইবার) মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ - বছরে ২ বার প্রদান করা হয়।
আপ্যায়ন ভাতা ৩,০০০ টাকা কর্মকর্তা বা অতিথি আপ্যায়নের জন্য মাসিক বরাদ্দ।
শিক্ষা সহায়তা ভাতা ২,০০০ টাকা সন্তানদের শিক্ষার জন্য নির্ধারিত।
যাতায়াত ভাতা ১,৫০০-৩,০০০ টাকা (এলাকার উপর নির্ভরশীল) কর্মস্থল ভেদে পরিবর্তন হয়, বিশেষ করে যারা শহরের বাইরে কাজ করেন।
মোবাইল বিল/ইন্টারনেট ৫০০-১,০০০ টাকা সরকারি মোবাইল ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত বরাদ্দ।
সর্বমোট আনুমানিক আয় ১,৩৫,০০০–১,৪৫,০০০ টাকা ভাতাভিত্তিক প্রকৃত মাসিক আয় (বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যোগ করে)।

স্থানভেদে অন্যান্য ভাতা ও সুবিধাদি সমূহঃ

  • গাড়ির সুবিধা
  • পোশাক পরিচ্ছদ সুবিধা
  • টিফিন ভাতা
  • আপ্যায়ন ভাতা
  • শ্রান্তি বিনোদন ভাতা
  • ভ্রমণ ভাতা
  • পাহাড়ি ও দূর্গম ভাতা
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
  • বেতন স্কেল অনুযায়ী বাড়িভাড়া ভাতা শহরভেদে ভিন্ন হতে পারে।
  • উৎসব ভাতা সাধারণত মূল বেতনের সমপরিমাণ দেওয়া হয় বছরে দুবার।
  • অন্যান্য সুবিধা বিভাগভেদে আলাদা হয়ে থাকে।
  • প্রতিষ্ঠানভেদে ভাতা কিছুটা কম বেশি হতে পারে।

গ্রেড অনুসারে পদোন্নতি ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন

১) সরকারি চাকরির প্রতিটি গ্রেড অনুযায়ী পদোন্নতির একটি নির্দিষ্ট ধাপ থাকে। আপনি যদি চাকরির ১৭তম থেকে ২০তম গ্রেডে (চতুর্থ শ্রেণী) থেকেন, যেমন- অফিস সহকারী, পরিচ্ছন্ন কর্মী, মালি, নাইট গার্ড ইত্যাদি পদে, তাহলে সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছরের অভিজ্ঞতার পর আপনি সিনিয়র সহকারী বা অফিস সুপার, পদে পদোন্নতির সুযোগ পাবেন।

কিন্তু পরিচ্ছন্ন কর্মী, মালি, নাইট গার্ডদের সেই সুযোগ নেই। তবে হ্যা, আপনি যদি শিক্ষিত হয়ে ভালো কর্মদক্ষতা দেখাতে পারেন, তাহলে আপনাকে পরিচ্ছন্ন কর্ম, মালি বা নাইট গার্ড থেকে অফিস সহকারীতে পদোন্নতির সুযোগ করে দিতে পারে। এই সমস্ত পদোন্নতির জন্য প্রয়োজন হয় ভালো কর্মদক্ষতা ও বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (ACR)।

২) ১৬তম থেকে ১১তম গ্রেডে (তৃতীয় শ্রেণি) যারা কর্মরত থাকেন, যেমন- হিসাব সহকারী বা সহকারী সার্টিফিকেট অফিসার, সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, তারা ৪ থেকে ৬ বছরের অভিজ্ঞতা ও প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা অডিট অফিসার পদে উন্নীত হতে পারেন। এই স্তরে দক্ষতা ও যোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


৩) এরপর ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা (দ্বিতীয় শ্রেণী), যেমন- প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা সহকারী প্রোগ্রামার, সাধারণত ৪-৫ বছর পর সিনিয়র অফিসার বা সহকারী পরিচালক হিসেবে উন্নীত হন। এখানে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

৪) ৯ম থেকে ৬ষ্ঠ (প্রথম শ্রেণী) গ্রেডে যারা থাকেন, যেমন- সিনিয়র অফিসার বা এক্সিকিউটিভ অফিসার, তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী সচিব বা উপ-পরিচালক হতে পারেন। এসব পদে যেতে হলে প্রথমে নবম গ্রেডে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় অথবা অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সার্কুলারের নবম গ্রেডের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।  অনেক সময়  প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ প্রমোশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।

এই সমস্ত বিষয়গুলো নির্ভর করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার ওপর। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা যেহেতু একই রকম হয় না সেহেতু পদোন্নতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়ম নীতিমালা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানে উপরের এই নিয়মগুলো মেনেই পদোন্নতি হয়। 

সবচেয়ে উঁচু পদগুলো, যেমন: উপ-পরিচালক, অতিরিক্ত সচিব বা সচিব পদে পৌঁছাতে হয় ৫ম থেকে ১ম গ্রেডে পদোন্নতি হওয়ার মাধ্যমে। এই পদগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি অভিজ্ঞতা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং সরকারের আস্থা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যদি আপনি সরকারি চাকরিতে সফল ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে শুরু থেকেই নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলুন। নিয়মিত ট্রেনিং নিন, কাজে সৃজনশীলতা দেখান এবং সব সময় নিয়মকানুন মেনে চলুন। এই ধরণের সচেতনতা ও পরিশ্রমই ভবিষ্যতে আপনার পদোন্নতির পথ সুগম করবে।

গ্রেড অনুযায়ী চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা

১) সরকারি চাকরির প্রতিটি গ্রেডে চাকরি পাওয়ার জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দক্ষতা প্রয়োজন হয়। সাধারণত ২০তম থেকে ১৭তম (৪র্থ শ্রেণী) গ্রেডের নিচু স্তরের পদে চাকরি পাওয়ার জন্য এসএসসি বা এইচএসসি পাস হলেই আবেদন করা যায়। যেমন- অফিস সহকারী, নিরাপত্তা প্রহরী, এমএলএসএস ইত্যাদি পদে আপনি যদি নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে থাকেন এবং মৌলিক দক্ষতা থাকে, তাহলে আবেদন করতে পারবেন।

২) ১৬তম থেকে ১১তম গ্রেডে (৩য় শ্রেণি), যেমন- অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, হিসাব সহকারী, কনিষ্ঠ সহকারী, এসব পদের জন্য কমপক্ষে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হয় এবং কম্পিউটার চালনার দক্ষতা থাকলে সেটা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়।

৩) ১০তম গ্রেড (২য় শ্রেণী), যেমন- বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক, সহকারী পরিচালক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, এই ধরনের পদের জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রয়োজন ও নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জ্ঞান চাওয়া হতে পারে। অনেক সময় এসব পদের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতা অথবা পেশাগত ডিগ্রি যেমন BBA, MBA, LLB, বা অন্যান্য টেকনিক্যাল ডিগ্রি দরকার হয়।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের চাকরি সার্কুলারে সকল বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদন করার সুযোগ থাকে। তবে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে সহকারী পরিচালক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা নবম গ্রেডে চাকরি করে। এটি সম্পূর্ণ সার্কুলার এর উপরে  নির্ভর করে। 

৪) সবচেয়ে উচ্চ গ্রেড অর্থাৎ ৯ম থেকে ১ম গ্রেডে (১ম শ্রেণী) চাকরি পাওয়ার জন্য সাধারণত বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) এর মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বা চাকরির সার্কুলার অনুযায়ী নবম গ্রেডের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এই ধরনের পদে যেমন সহকারী কমিশনার, সহকারী সচিব বা ক্যাডার পদসমূহে চাকরি পেতে চাইলে আপনাকে শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়, বরং মেধা, নেতৃত্বগুণ এবং দেশসেবার মানসিকতাও থাকতে হবে।

যেকোনো সাবজেক্টে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেও আপনারা নবম গ্রেডের যে কোন চাকরির পরীক্ষা দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে রেজাল্ট অবশ্যই প্রথম বিভাগ থাকতে হবে।

১ম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার সাধারণত ক্যাডার বা উচ্চ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা হয়ে থাকেন। এই গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব ও মর্যাদা উভয়ই বেশি। তারা সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। চাকরির নিরাপত্তা ও পদোন্নতির সুযোগও তুলনামূলক ভালো। সমাজে এদের সম্মানজনক অবস্থান রয়েছে। এজন্য অনেকেই এই পদে চাকরি পাওয়াকে লক্ষ্য করেন।

বিসিএস ক্যাডারদের নবম গ্রেডে বেতন দেওয়া হয়। বিসিএস ক্যাডার ছাড়াও বাংলাদেশর আরও যে সমস্ত চাকরি গুলোতে নবম গ্রেডে বেতন দেওয়া হয় তা জানার জন্য নিচের এই আর্টিকেলটি পড়ুন 👇


জেনে রাখুন -

অতএব, আপনি যদি সরকারি চাকরিতে ঢুকতে চান, তাহলে আপনার গ্রেড অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে এবং নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জনে মনোযোগী হতে হবে। নিজেকে যত দক্ষ করে গড়ে তুলবেন, সরকারি চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি বাড়বে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য-

সরকারি চাকরির গ্রেড সমূহে পদবী, বেতন স্কেল এবং চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা প্রতিষ্ঠানভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। যেমন, সরকারি অফিস থেকে শুরু করে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা বিভিন্ন সংস্থা পর্যন্ত, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি এবং প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে গ্রেডের জন্য বেতন ও যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়।

এমনকি, কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব নিয়োগ নীতি অনুসরণ করে যা সাধারণ সরকারি চাকরির নিয়মের বাইরে হতে পারে। তাই আপনি যদি কোনও নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় চাকরি করতে চান, তবে সেই প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট নিয়মাবলী এবং শর্তাবলী জানার জন্য অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি এবং সাইটগুলো পরীক্ষা করা জরুরি।

সঠিক গ্রেড বেছে নেবার উপায়

নিজের জন্য সঠিক গ্রেড বেছে নেওয়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা উচিত, যা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। এখানে কিছু নির্দেশিকা দেয়া হলো:

আপনার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা: সঠিক গ্রেড বেছে নেওয়ার প্রথম ধাপ হলো আপনার শিক্ষা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করা। আপনি কোন গ্রেডের জন্য যোগ্য তা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। সাধারণত, উচ্চতর গ্রেডের জন্য উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অধিক কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়।

পদের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি: আপনি কোন পদে চাকরি করতে চান, তার দায়িত্ব ও কাজের পরিধি ভালোভাবে বুঝে নিন। উচ্চ গ্রেডের পদে সাধারণত বেশি দায়িত্ব ও জটিল কাজ থাকে, যা আপনার ক্যারিয়ার উন্নতির জন্য উপকারী হতে পারে, তবে এসব কাজের চাপ ও সময়ও বেশি।

বেতন ও সুবিধা: সঠিক গ্রেড বেছে নেওয়ার সময় বেতন স্কেল এবং অন্যান্য সুবিধাগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। আপনি কোন গ্রেডে ভালো বেতন এবং সুবিধা পাবেন, সেটি আপনার ব্যক্তিগত চাহিদার সাথে মানানসই হতে হবে।

ক্যারিয়ার উন্নতি: বিভিন্ন গ্রেডে চাকরি করলে আপনার ক্যারিয়ার উন্নতি ও পদোন্নতির সুযোগ কেমন, এটি ভাবতে হবে। উচ্চ গ্রেডের পদে সাধারণত পদোন্নতি এবং ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ বেশি থাকে।

ব্যক্তিগত আগ্রহ ও লক্ষ্য: শেষ কথা হলো, আপনি কী ধরনের কাজ করতে চান এবং আপনার পেশাগত লক্ষ্য কী, তা নিশ্চিত করে সঠিক গ্রেড বেছে নেওয়া উচিত। পছন্দের কাজ এবং দায়িত্বের সাথে মিল রেখে গ্রেড নির্বাচন করলে আপনার কর্মজীবন আরও সফল হতে পারে।

এভাবে আপনি আপনার জন্য উপযুক্ত গ্রেড বেছে নিতে পারবেন, যা আপনার দক্ষতা এবং ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার পরিকল্পনার সাথে মিলবে।

ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কী? পার্থক্য কীভাবে বুঝবেন?

ক্যাডার ও নন-ক্যাডার এই দুটি শ্রেণির মধ্যে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য, যা চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য জানা খুবই জরুরি।

১) ক্যাডার হলো সেই সকল সরকারি পদ, যেগুলোতে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSC) সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকে। বর্তমানে দেশে প্রায় ২৭টি ক্যাডার পদ রয়েছে, যেমন: প্রশাসন ক্যাডার, পুলিশ ক্যাডার, শিক্ষা ক্যাডার, স্বাস্থ্য ক্যাডার ইত্যাদি।

এসব পদে যারা নিয়োগ পান, তারা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সময়ের সঙ্গে পদোন্নতির মাধ্যমে তারা সচিবালয় বা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেতে পারেন।
ক্যাডার-ও-নন-ক্যাডার-কী
২) অন্যদিকে, নন-ক্যাডার হলো সেই সমস্ত সরকারি চাকরি, যা ক্যাডার বহির্ভূত। অর্থাৎ, এসব পদেও পিএসসি নিয়োগ দেয়, তবে এদের কাজের পরিধি সাধারণত নির্দিষ্ট থাকে এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। নন-ক্যাডাররা প্রশাসনিক সহকারী, গবেষণা কর্মকর্তা, অফিসার পদে কাজ করেন, কিন্তু তারা সচিব বা পরিচালক পর্যায়ে উঠতে পারেন না।

* মূল পার্থক্য হলো - ক্যাডার কর্মকর্তারা পদোন্নতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় পৌঁছাতে পারেন এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক মর্যাদা ও দাপ্তরিক ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। অন্যদিকে, নন-ক্যাডার চাকরিগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট স্তরে সীমাবদ্ধ থাকে।

এই কারণে অনেকেই বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাডার পদে চাকরি পাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দেন এবং দীর্ঘমেয়াদে একটি উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেন।

FAQs

প্রশ্নঃ সরকারি চাকরির বয়স সীমা কত?
উত্তরঃ বাংলাদেশের সরকারি চাকরির বয়স সীমা ৩২ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত আপনি সরকারি চাকরির জন্য আবেদন ও পরীক্ষা দিতে পারবেন। পূর্বে বাংলাদেশের সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩০ ছিল। পূর্বে শুধুমাত্র কোটাধারী ছাত্র-ছাত্রীরা ৩২ বছর পর্যন্ত চাকরির আবেদন ও পরীক্ষা দিতে পারতো।

প্রশ্নঃ সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা কত?
উত্তরঃ বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর থেকে ৬২ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে সুপ্রিম কোর্টের যারা বিচারপতি রয়েছেন তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬৭ বছর।

প্রশ্নঃ সরকারি চাকরি ইংরেজি কি?
উত্তরঃ সরকারি চাকরি ইংরেজি হচ্ছে- Government job।

প্রশ্নঃ সরকারি চাকরি কি হালাল?
উত্তরঃ হ্যাঁ, সমস্ত সরকারি চাকরি হালাল যদি আপনি সৎ পথে থেকে চাকরি করেন এবং কোন ঘুষ জালিয়াতি না করেন। আপনি সৎ থেকে যেকোনো কাজ করলে সে কাজ হালাল।

প্রশ্নঃ সরকারি চাকরি কি জায়েজ?
উত্তরঃ যে কাজে হালাল উপার্জন রয়েছে সে সমস্ত সকল কাজই জায়েজ। সুতরাং সরকারি চাকরি করে আপনি যদি হালাল উপার্জন করেন তাহলে সেটি অবশ্যই জায়েজ হবে।

উপসংহার

এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারলেন সরকারি চাকরির গ্রেড কয়টি এবং কোন গ্রেডে কেমন সুবিধা থাকে। আপনি যদি সরকারি চাকরি পেতে আগ্রহী হন, তাহলে এই তথ্যগুলো আপনাকে পরিষ্কার ধারণা দেবে। এটি শুধু আপনার প্রস্তুতিতে নয়, বরং ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সহায়তা করবে। এখন আপনি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে এগোতে পারবেন।
এই পোস্ট শেয়ার করুন
Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url