নিজ জেলায় সরকারি চাকরির সেরা ১০টি প্রতিষ্ঠান

আপনারা যারা নিজ জেলায় সরকারি চাকরি করতে চান তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। বাংলাদেশের যে সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে তাদের মধ্যে বাছাইকৃত দশটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমি আজকে আলোচনা করব। কারণ এই দশটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দেওয়ার পরে আপনারা নিজ জেলায় নিজ বাসা থেকে চাকরি করতে পারবেন।
নিজ-জেলায়-সরকারি-চাকরি
তাই আপনারা যদি ঘরে বসে নিজের জেলায় সরকারি চাকরি করতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি অবশ্যই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে আপনি জানতে পারবেন নিজ জেলায় চাকরি করতে হলে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আপনাকে চাকরির আবেদন করতে হবে ও পরীক্ষা দিতে হবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ নিজ জেলায় সরকারি চাকরি

এই ব্লগ পোস্ট থেকে আপনি যে সমস্ত তথ্য পাবেন তা এক নজরে দেখে নিন। অথবা আপনি চাইলে যে সেকশন থেকে পড়তে চান সেখানে ক্লিক করুন-

নিজ জেলায় সরকারি চাকরি

বাসায় থেকে সরকারি চাকরি করলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন- সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চাকরি  করার পর পরবর্তী সময় গুলো পরিবারের সাথে সময় কাটানো যায়। বাইরে থাকা খাওয়ার খরচ এর প্রয়োজন পড়ে না।


অন্যদিকে আপনি যদি নিজের জেলা ব্যতীত অন্য কোন জায়গায় সরকারি চাকরি করেন তাহলে আপনাকে ঘর ভাড়া দিতে হবে, খাবার খরচের জন্য আলাদাভাবে হিসাব রাখতে হবে, থাকার জন্য আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হবে। দেখাশোনা করার জন্য পারিবারিক আপনজনদের পাবেন না।

ছেলেরা নিজ জেলা ব্যতীত অন্য জেলায় চাকরি করতে পারলেও মেয়েরা সাধারণত নিজের জেলাতেই চাকরি করতে চায়।এজন্য আমি এখন বিস্তারিতভাবে এখানে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করব যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র নিজ জেলা থেকে চাকরি প্রত্যাশীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে।

নিজের জেলায় সরকারি চাকরির সেরা ১০টি প্রতিষ্ঠান
ক্রমিক নং কার্যালয়-অধিদপ্তর-প্রতিষ্ঠান
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (DC Office)
প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক
ইউনিয়ন পরিষদ (সচিব)
পোস্ট অফিস
পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়
ইউনিয়ন ভূমি অফিস
NTRCA (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক)
খাদ্য অধিদপ্তর
কমিউনিটি ক্লিনিক
১০ সমাজসেবা অধিদপ্তর

১) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (DC Office) :

প্রতিবছর ডিসি অফিসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া হয়। এখানে শুধুমাত্র নিজ জেলার চাকরি প্রার্থীরা আবেদন করতে পারে এবং পরীক্ষা দিতে পারে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সকল চাকরি বাসায় থেকে করা যায়।

২) প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক :

প্রাইমারিতে সাধারণত বাসার আশেপাশেই নিয়ম দেওয়া হয় তবে যদি পোস্ট ফাঁকা না থাকে তাহলে পাশের কোন গ্রাম বা উপজেলায় নিয়োগ দিয়ে থাকে।

৩) ইউনিয়ন পরিষদ (সচিব) :

ইউনিয়ন পরিষদ ডিসি অফিসের আন্ডারে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এখানেও নিজ জেলা বা উপজেলা অথবা পাশের কোন উপজেলাতে নিয়োগ দেওয়া হয়।

৪) পোস্ট অফিস :

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সবচেয়ে আরামদায়ক চাকরি হচ্ছে পোস্ট অফিসের চাকরি। এখানেও বাসার খুব কাছে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং কাজের চাপ একদমই থাকে না।

৫) পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় :

বাসায় থেকে চাকরি করার জন্য পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়কে আপনি বেছে নিতে পারেন। পরিবার কল্যাণ সহকারী এই পদে শুধুমাত্র মেয়েরা চাকরি করতে পারে এবংপরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ছেলে-মেয়ে উভয়ই চাকরি করতে পারবেন।

৬) ইউনিয়ন ভূমি অফিস :

ভূমি অফিসে নিজ বাসা থেকে চাকরি করা যায় এবং ভূমি অফিসে চাকরি করলে অনেক সম্মান পাওয়া যায়। কারণ এখানে জমির বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে কাজ করা হয়। এক্ষেত্রে সকলে আপনাকে চিনবে যদি আপনি এই চাকরিটি করেন।

৭) NTRCA (মাধ্যমিক শিক্ষক) :

NTRCA নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমিক শিক্ষকদের বাসার আশেপাশেই নিয়োগ দেওয়া হয়।

৮) খাদ্য অধিদপ্তর :

খাদ্য অধিদপ্তরের নিচের পদ গুলোতে নিজ জেলায় নিয়োগ দেওয়া হয়।

৯) কমিউনিটি ক্লিনিক বা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার :

ঘরে বসে খুব কাছে চাকরি করতে চাইলে আপনি কমিউনিটি ক্লিনিক কমিউনিটি হেলথ কেয়ারের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন। এখানে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার পদে নিজ জেলায় চাকরি দেওয়া হয়।

১০) সমাজসেবা অধিদপ্তর :

সমাজসেবা অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিগুলো নিজ জেলায় হয়ে থাকে।

অতিরিক্ত ২টি চাকরি:

১) উপরের ১০টি সরকারি চাকরি ব্যতীত আরো একটি সরকারি চাকরি রয়েছে এবং এটির নিচের পদগুলোতে নিজ জেলাতে চাকরি করা যায়। যেমনঃ উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের নিয়োগ অন্য জেলাতেও হয়ে থাকে।


এজন্য আমি এক থেকে দশের মধ্যে এটিকে রাখেনি। আপনারা চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়েও পরীক্ষা দিবেন কারণ এখানে প্রায় ৬০% থেকে ৭০% সম্ভাবনা রয়েছে নিজ জেলায় পোস্টিং পাওয়ার।

২) এছাড়া আরো রয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। এটি একটি সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক এজন্য আপনারা যারা বাসার কাছে থেকে কোন ব্যাংকে চাকরি করতে চান তারা এটিকে বেছে নিতে পারেন। এখানে আপনারা যদি মাঠ সহকারি পদে আবেদন করেন তাহলে বাসার কাছেই পোস্টিং পাবেন।

নিজের জেলায় সরকারি চাকরি সম্পর্কে কিছু তথ্য

মনে রাখবেন প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিগুলো নিজ জেলায় হয় না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বেশিরভাগ চাকরি নিয়োগ নিজ জেলা বা উপজেলায় হয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো দেখা যায় কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিজ জেলার বাইরেও চাকরি করতে হয়।


তাই উপরের এই দশটা সরকারি চাকরি ব্যতীত আরো অনেক সরকারি চাকরি রয়েছে যেগুলোতে নিজ জেলাতেই চাকরি করা সম্ভব। এজন্য আপনাদের নিয়মিত চাকরির বিজ্ঞপ্তি গুলোতে খোঁজখবর রাখতে হবে।

চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইউটিউব চ্যানেল ও ওয়েবসাইট

আপনারা যারা চাকরিপ্রত্যশীল ভাই-বোন রয়েছেন তাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে- চাকরির আপডেট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গুলো কোথায় পাওয়া যাবে ?
চাকরির-নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি-ইউটিউব-চ্যানেল-ও-ওয়েবসাইট
বিভিন্ন ধরনের সরকারি চাকরি নিয়োগ সম্পর্কিত আপডেট নিউজ পাওয়ার জন্য আপনারা যে সমস্ত ইউটিউব চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করবেন তার লিস্ট দেখে নিন-

টেবিল চাকরির বিজ্ঞপ্তির Youtube চ্যানেল সমূহ
Chennel Name Channel Link বৈশিষ্ট্য
SR Job Life https://www.youtube.com/@srjoblife সরকারি জব, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ইত্যাদি।
All news online BD https://www.youtube.com/@AllnewsonlineBD সকল ধরনের সরকারি জব বিজ্ঞপ্তি
All JOB News Bangladesh https://www.youtube.com/@alljobnewsbd সরকারি জব, ব্র্যাক, এনজিও, বীমা ইত্যাদি।
Shohoj Solution https://www.youtube.com/@ShohojSolution সরকারি জব, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, প্রাইভেট ব্যাংক, ঔষধ কোম্পানি সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি সমূহ।
Raihan Kabir https://www.youtube.com/@RaihanKabiryt চাকরির আবেদন পদ্ধতি, চাকরির বিভিন্ন নিয়ম কানুন সম্পর্কিত আলোচনা এবং টিপস

চাকরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ওয়েবসাইট

এ ছাড়া আপনারা যদি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের চাকরির বিজ্ঞপ্তি পেতে চান তাহলে নিচের এই ওয়েবসাইটে থেকে বিজ্ঞপ্তি গুলো পাবেন।

কেন সবাই নিজ এলাকায় পোস্টিং চায়?

বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে সরকারি চাকরি এখনও সবার পছন্দের শীর্ষে। তবে সরকারি চাকরি পাওয়ার পর অনেকেই চান নিজ জেলায় বা নিজ এলাকায় পোস্টিং হোক। কিন্তু কেন এমনটা চান সবাই? আসুন জেনে নেওয়া যাক নিজের জেলায় সরকারি চাকরি করার সুবিধা সম্পর্কে।
নিজ-জেলায়-সরকারি-চাকরি-করার-সুবিধা

নিজ জেলায় সরকারি চাকরি করার সুবিধা

১. পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সান্নিধ্য: নিজ এলাকায় চাকরি থাকলে পরিবারের কাছাকাছি থাকা যায়। ফলে মা-বাবার দেখাশোনা, সন্তানদের লেখাপড়া এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালনে কোনো ঝামেলা হয় না। আত্মীয়স্বজনদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগও সহজ হয়।

২. পরিচিত পরিবেশ ও সংস্কৃতি: নিজ জেলার ভাষা, আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি আগে থেকেই পরিচিত থাকে। ফলে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার চাপ থাকে না। কাজেও মনোযোগ বেশি দেওয়া সম্ভব হয়।

৩. যাতায়াতে সময় ও খরচ বাঁচে: নিজ এলাকায় চাকরি থাকলে অফিসে যাতায়াতে সময় ও খরচ অনেক কমে যায়। কাছে পোস্টিং পড়লে অনেক সময় হেঁটেই অফিসে যাওয়া যায়। এতে করে মানসিক চাপও কম হয়।

৪. সামাজিক মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা: নিজ এলাকায় সরকারি চাকরিজীবীদের সামাজিক মর্যাদা সাধারণত বেশি থাকে। এলাকার মানুষ তাদের বিশ্বাস করে, শ্রদ্ধা করে। ফলে একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে আপনি মানুষের কাছে দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা পান।

৫. বাড়তি উপার্জনের সুযোগ: নিজ এলাকায় চেনাজানা পরিবেশে অনেক সময় বাড়তি উপার্জনের সুযোগ তৈরি হয়, যেমন- টিউশনি, খণ্ডকালীন পরামর্শ, কৃষি বা ব্যবসায়িক কাজেও যুক্ত হওয়া যায়।

৬. নিরাপত্তার অনুভব: অচেনা এলাকায় চাকরি করতে গেলে অনেক সময় নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি থাকে। কিন্তু নিজ জেলায় এমন ঝুঁকি অনেকটাই কম। নিজের বাড়ি ও এলাকার লোকজন থাকায় নিরাপত্তাবোধ বাড়ে।

৭. জরুরি পরিস্থিতি সহজে সামাল দেওয়া যায়: পরিবারে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে বা কোনো সমস্যায় পড়লে নিজের এলাকায় থাকলে দ্রুত সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়। অন্যদিকে, দূরের জেলায় থাকলে সাহায্য করতে সময় লাগে।

FAQs

প্রশ্নঃ নিজের জেলায় চাকরির জন্য কি বিশেষ কোন যোগ্যতা দরকার হয়?
উত্তরঃ চাকরির ধরণ অনুযায়ী যোগ্যতা নির্ধারিত হয়। তবে সাধারণত স্থানীয় ভাষা ও এলাকার বাস্তবতা সম্পর্কে জানাশোনা থাকলে নিয়োগকারীরা সেটাকে পজিটিভলি নেয়।

প্রশ্নঃ নিজের জেলায় চাকরি পেতে প্রস্তুতি কীভাবে নেব?
উত্তরঃ সংশ্লিষ্ট চাকরির পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। পাশাপাশি নিজ এলাকার ইতিহাস ও ভৌগলিক তথ্য সম্পর্কেও ধারণা রাখা ভালো।

প্রশ্নঃ কোন বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করা যায়?
উত্তরঃ সরকারি চাকরির জন্য ১৮ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যায়।

প্রশ্নঃ নিজের জেলায় চাকরি পেয়ে গেলে বদলি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কি?
উত্তরঃ অনেক ক্ষেত্রেই চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর বা বিশেষ প্রয়োজনে বদলির সুযোগ থাকে। তবে অনেক পদের ক্ষেত্রে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিজ জেলাতেই কর্মরত রাখা হয়।

শেষ কথা

নিজ জেলার চাকরি অনেকের স্বপ্ন। যদিও সরকারি চাকরিতে নিজ এলাকায় পোস্টিং পাওয়া নির্ভর করে নিয়োগ বিধি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ওপর, তবুও সুযোগ পেলে এর সুবিধা অসীম। তাই চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই পোস্টিংয়ে নিজ জেলা পেতে চান, যা একেবারেই যৌক্তিক। আপনারা যারা নিজ জেলায় আরাম-আয়েশে সরকারি চাকরি করতে চান, তারা আমার দেওয়া সরকারি চাকরির লিস্ট ফলো করে, চাকরির প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন।
এই পোস্ট শেয়ার করুন
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url